অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা (১৪) হত্যা মামলার একমাত্র আসামি ওবায়দুল খানের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। আগামী ৮ মে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর অষ্টম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবুল কাশেম এ হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন করে এই দিন ধার্য করেন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রিশা হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হলো।
এদিন মামলার একমাত্র আসামি ওবায়দুল খানকে আদালতে হাজির করা হয়। অভিযোগ গঠনের সময় নিজেকে তিনি নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।
রিশার মা তানিয়া হোসেনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি ও আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
গত বছর ২৪ আগস্ট ওবায়দুল খানের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয় রিশা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ আগস্ট তার মৃত্যু হয়। রিশা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, ২৪ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরীক্ষা শেষে স্কুল থেকে বেরিয়ে রিশা রাস্তার ওপারে যাওয়ার জন্য পদচারী-সেতুতে ওঠে। সেতুর মাঝামাঝি পৌঁছালে ওবায়দুল তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। রিশার চিৎকারে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ও কয়েকজন অভিভাবক ছুটে আসেন। এরপর তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার দিন হাসপাতালে রিশার মা জানিয়েছিলেন, তিনি ও তাঁর মেয়ে ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের একটি দরজির দোকান থেকে সালোয়ার-কামিজ বানাতেন। যোগাযোগের জন্য তাঁর মুঠোফোন নম্বর রেখেছিলেন ওই দোকানের কর্মচারীরা। ওই নম্বরে ফোন করে দোকানের কর্মচারী ওবায়দুল তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতেন। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে তাঁর মেয়েকে ওবায়দুল স্কুলের সামনে উত্ত্যক্ত করতেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়: ৫/৬ মাস আগে রিশা ও তার মা তানিয়া ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটে বৈশাখী টেইলার্সে কাপড় সেলাই করাতে যান। এ সময় তার মা ওই দোকানের রসিদের রিসিভ কপিতে ফোন নম্বর দিয়ে আসেন। ওই টেইলার্সের কর্মচারী ওবায়দুল রিসিভ কপি থেকে ফোন নম্বর নিয়ে রিশাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করত। রিশার মা এ বিষয়ে ওবায়দুলকে শাসান বলেও জানা যায়।
গত ২৪ আগস্ট রিশা ও তার বন্ধু মুনতারিফ রহমান রাফি পরীক্ষা শেষে কাকরাইল ওভারব্রিজ পার হওয়ার সময় ওবায়দুল রিশাকে আবারও প্রেমের প্রস্তাব দেয়। রিশা তা প্রত্যাখ্যান করলে ওবায়দুল তাকে ছুরিকাঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় রিশাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ আগস্ট রিশা মারা যায়।
ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ২৪ আগস্ট রিশার মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। অন্যদিকে রিশার মৃত্যুতে ওবায়দুলকে গ্রেফতার ও বিচারে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৩১ আগস্ট ভোরে নীলফামারী থেকে ওবায়দুলকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
পরে ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা সিএমএম আদালতে ওবায়দুলকে হাজির করে রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলী হোসেন ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ঢাকা মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেন ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ৫ সেপ্টেম্বর ওবায়দুল রিশাকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে ওবায়দুল বলেন, রিশাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল সে। কিন্তু রিশা তা প্রত্যাখ্যান করায় তাকে ছুরিকাঘাত করে ওবায়দুল। জবানবন্দি শেষে ওবায়দুলকে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
Comments
comments