Download Free BIGtheme.net
Home / ব্রেকিং নিউজ / আপন জুয়েলার্স ও রেইনট্রি মালিককে শুল্ক গোয়েন্দাদের তলব

আপন জুয়েলার্স ও রেইনট্রি মালিককে শুল্ক গোয়েন্দাদের তলব

অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীতে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্র অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ সোনা-হীরা আটকের ঘটনায় ও অবৈধ মদ রাখার দায়ে হোটেল দ্য রেইনট্রি এর মালিককে তলব করেছে শুল্ক গো‌য়েন্দা ও তদন্ত অ‌ধিদফত‌র।

সোমবার (১৫ মে) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানে ব্যাখ্যাহীনভাবে মজুদ স্বর্ণ ও ডায়মন্ড আটকের ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের মালিকদের তলব করা হয়েছে। একই সময় দ্য হোটেল রেইনট্রি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও (এমডি) মদ রাখার দায়ে সমন দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ১৭ মে (বুধবার) বেলা ১১টায় শুল্ক গোয়েন্দার কাকরাইলের সদর দফতরে কাগজপত্রসহ তাদের হাজির হতে বলা হয়েছে।

রোববার (১৪ মে) আপন জুয়েলার্সের গুলশানের দুটি, উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কোয়ারের শাখায় অভিযান চালিয়ে ২৮৬ কেজি সোনা ও ৬১ গ্রাম হীরা ব্যাখ্যাহীনভাবে মজুত রাখার দায়ে সাময়িক আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এসবের মূল্য ৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এগুলো সিলগালা করে আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। এ পরিমাণ স্বর্ণ ও হীরা রাখার ব্যাপারে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানার জন্য আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ, তার বাবা, ছেলে সিফাত ও তার এক ভাইসহ পরিবারের চারজনকে তলব করা হয়েছে।

রোববার ওই একই সময়ে শুল্ক গোয়েন্দারা বনানীর রেইন ট্রি হোটেলেও অভিযান চালান, যেখানে গত ২৮ মার্চ সাফাত ও তার বন্ধুরা দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বলে মামলার অভিযোগ। ওই অভিযানে হোটেলের বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে ১০ বোতল বিদেশি মদ ও নথিপত্র জব্দ করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তারা বলছেন, হোটেল কর্তৃপক্ষ বারের লাইসেন্স দেখাতে না পারালেও সেখানে মদ রাখা হয়েছিল। গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যাট নিবন্ধন নিলেও কোনো অর্থ পরিশোধ না করে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ আট লাখ ১৫ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলেও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অভিযোগ।

অবৈধ মদ রাখার দায়ে রেইনট্রির মালিক সংসদ বি এইচ হারুনের তিন ছেলে চেয়ারম্যান নাহিয়ান হারুন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদনান হারুন ও পরিচালক মাহির হারুনকে তলব করা হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বি এইচ হারুনের ছেলে মাহির হারুন রাজধানীর বনানীর এই চার তারকা হোটেলটির মালিক। মাহিরের বন্ধু পরিচয় দিয়েই সাফাত ধর্ষণের ঘটনার দিক ওই হোটেলে উঠেছিলেন বলে হোটেলকর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বন্ধুর সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন দুই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণী। ওই ঘটনায় গত ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ ও সাদমান সাকিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তারা। মামলার পর থেকেই পলাতক ছিলেন আসামিরা। এরপর প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও আরেক আসামি সাদমান সাকিফকে বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেটে গ্রেফতার করা হয়।

সাফাত ও সাদমান সিলেটে আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। শুক্রবার (১২ মে) দুই ছাত্রীকে গণ ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি সাফাত আহমেদ এর ৬ দিন ও সাদমান সাকিফের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে উইমেন সাপোর্ট এনড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তাঁর বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। বাদী ও তাঁর বান্ধবীকে জোর করে ঘরে নিয়ে যান আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ একাধিকবার এবং বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করেন। আসামি সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তাঁর মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে দুই ছাত্রী জানান, গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে তাঁদের নেওয়া হয়। শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাঁদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলে যাওয়ার আগে দুজনই জানতেন না সেখানে পার্টি হবে। এ সময় তাঁদের সঙ্গে শাহরিয়ার নামের এক বন্ধু ছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। হোটেলে যাওয়ার পর শাফাত ও নাঈমের সঙ্গে তাঁরা আরও দুই তরুণীকে দেখেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় শাহরিয়ারসহ দুই তরুণী চলে আসতে চেয়েছিলেন। তখন আসামিরা শাহরিয়ারের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নেন এবং তাঁকে মারধর করেন।

এরপর দুই তরুণীকে অস্ত্রের মুখে একটি কক্ষে নিয়ে যান। ধর্ষণ করার সময় শাফাত গাড়িচালককে ভিডিও চিত্র ধারণ করতে বলেন। আর নাঈম তাঁদের মারধর করেন। তাঁরা এ ঘটনা জানিয়ে দেবেন বলে জানানোর পর শাফাত তাঁর দেহরক্ষীকে ওই দুই তরুণীর বাসায় তথ্য সংগ্রহের জন্য পাঠান। লোকলজ্জার ভয়ে এবং মানসিকভাবে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন আসামিরা। তাঁদের কথামতো না চললে বা এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।

Comments

comments