Download Free BIGtheme.net
Home / ইন্টারভিউ / দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে মেধা পাচার রোধ করা সম্ভব হবে না

দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে মেধা পাচার রোধ করা সম্ভব হবে না

দেশপ্রেমী শিক্ষাবিদ, শিক্ষাদ্যোক্তা ও দক্ষ প্রশাসক প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ, চেয়ারম্যান, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ট্রাস্ট, প্রফেসর, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে প্রথম সারির যে ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, তন্মধ্যে নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে এটি একটি উল্লেখযোগ্য নাম। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বৈশিষ্ট্য হলো সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলা, কোয়ালিটি শিক্ষার ক্ষেত্রে আপোশ না করে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা পদ্ধতির উৎকর্ষ সাধন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মহাকর্মযজ্ঞে নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ যথাযথ সাড়া দিয়ে তাদের অবস্থান থেকে ডিজিটালাইজেশন কনসেপশন নিজেদের মধ্যে ধারণ করেছে। তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ, শাখা-প্রশাখাকে ডিজিটালাইজ করে দেশের প্রথম ডিজিটালাইজড বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার গৌরব অর্জন করেছে।

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজড করার রূপকার হলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ। আপাদমস্তক একজন শিক্ষক এবং নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষাবিদ ও দক্ষ শিক্ষাপ্রশাসক প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ এরই মধ্যে শিক্ষার বিস্তৃত অঙ্গনে সুপরিচিত হয়ে উঠেছেন। একজন ডায়নামিক শিক্ষাদ্যোক্তা হিসেবে প্রফেসর আব্দুল্লাহ লাভ করেছেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। সম্প্রতি তাঁর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মিলিত হন ক্যারিয়ার লাইন পত্রিকার সম্পাদক নাহিদ হাসান।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযোজনকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন

এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুল্লাহ বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এখানে সরকারি-বেসরকারি বলে বিভক্তি টানার কোনো সুযোগ নেই। সরকারি ব্যবস্থাপনায়ই হোক আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়ই হোক; মূল কথা হলো প্রতিটি নাগরিকের জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিত করা। বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি হচ্ছে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) প্রযুক্তি। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সেবার মান এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অধিকতর সুযোগ রয়েছে বিধায় শিল্পের প্রাইভেটাইজেশন হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় শিক্ষা-শিল্পের প্রাইভেটাইজেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একই সাথে বর্তমান সরকার শুধুমাত্র সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর না করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ইউজিসি’র ভূমিকাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন

Photo_1056এমন প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট শিক্ষাদ্যোক্তা প্রফেসর আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সঠিক ধারায় পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ইউজিসি’র ভূমিকা অভিভাবকসুলভ বলে আমি মনে করি। ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনীয় ভৌত কাঠামো নির্মাণ, আধুনিক শিক্ষা সরঞ্জামাদির যোগান ইত্যাদি ক্ষেত্রে মঞ্জুরি কমিশনের সার্বক্ষণিক নজরদারি ইতিবাচক অবদান রাখছে। সত্যি কথা বলতে মঞ্জুরি কমিশনের এ অভিভাবকসুলভ এবং নজরদারিমূলক ভূমিকাটুকু না থাকলে প্রাইভেট সেক্টরে শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যের প্রসার ঘটার সম্ভাবনা ছিল, যা শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করত। শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে স্বাধীন এক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করে তাকে কার্যকরী ভূমিকায় নিয়ে আসা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জমি ক্রয় ও অবকাঠামো নির্মাণে সহযোগিতা করা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মানোন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নেয়া, বিভিন্ন একাডেমিক প্রোগ্রামে পরিচালিত কারিকুলাম ও সিলেবাসের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া, শ্রেণিকক্ষে প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি ও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বাড়ানোর দিকে নজর দেয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইউজিসি’কে আরো এগিয়ে আসা দরকার বলে আমি মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান সাহেবের সাথে আমার কয়েকবার দেখা ও একান্তে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য তাঁর রয়েছে এক মহাপরিকল্পনা। এ লক্ষ্যে তিনি একের পর এক সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ঘুরে দাঁড়াবার জন্য তাঁর এই সাহসী ইচ্ছাকে আমি স্বাগত জানাই।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন

এমন জিজ্ঞাসার জবাবে শিক্ষাব্রতী আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, এটি সর্বজনজ্ঞাত সত্য। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই যেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব আরো প্রকট। এমনিতেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সিলেবাস হচ্ছে ইংরেজি মাধ্যমের, তার উপরে সিলেবাসগুলো হচ্ছে নর্থ আমেরিকান। দেশে এখন কাজ করছে প্রায় ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সার্বিক বিবেচনায় এতোগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দক্ষ শিক্ষক যোগান দেয়া, এটি অত্যন্ত বড় একটি চ্যালেঞ্জ বৈকি!

সম্প্রতি আপনার বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রথম ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, কীভাবে এটি সম্ভব হয়েছে

Photo_1057এমন জিজ্ঞাসার জবাবে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষাদ্যোক্তা প্রফেসর ইউসুফ আব্দুল্লাহ বলেন, প্রযুক্তি বিপ্লবের কারণে হয়তো সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন ছাত্র-শিকক্ষকে এক জায়গায় মিলিত হয়ে সরাসরি ক্লাস করার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। উন্নত বিশ্বে ভিডিও কনফারেন্সের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে একজন শিক্ষক ক্লাসে না এসেও তার সকল ক্লাস সময়মতো নিয়ে নিচ্ছেন। উন্নত বিশ্বে এসব বিষয় আজ পুরনো ব্যাপার। মুদ্রিত বইয়ে সুসমৃদ্ধ লাইব্রেরি জাদুঘরে রূপান্তরিত হতে পারে যেকোনো সময়। কেননা, ইলেক্ট্রনিক বই পত্রিকা আর সাময়িকী ইতোমধ্যেই মুদ্রিত বইয়ের স্থান দখল করে নিয়েছে। প্রযুক্তিগত এ পরিবর্তনগুলো প্রতিনিয়ত প্রচন্ড গতিতে বেড়ে চলছে। দেশে আজ সব পত্রিকার ইন্টারনেট সংস্করণই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

গত প্রায় ৩ বছর ধরে টানা নিরলস পরিশ্রম করে আমরা নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করার কাজটি করে এসেছি। অনলাইন এডমিশন, ই-লার্নিং প্লাটফর্ম, ভার্চুয়াল ক্লাস ফ্যাসিলিটি, ই-লাইব্রেরি, ই-পেমেন্ট, অনলাইন গ্রাজুয়েট ডিরেক্টরি এবং অটোমেশনের জন্য ঊচচ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করেছি। এসবের আওতায় শিক্ষার্থীরা অনলাইন ভিত্তিক নানাবিধ সুবিধা পেতে থাকবে।

উচ্চ শিক্ষার্থে এদেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশ যাত্রাকে আপনি কীভাবে দেখছেন

এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুল্লাহ বলেন, আমার দৃষ্টিতে এদেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গমনের কারণে বিপুল পরিমাণ মেধা এবং অর্থ সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। UNESCO এর ২০১৪ সালের একটি সমীক্ষার কিছু অংশ তুলে ধরতে চাই। যেখানে ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও কানাডাতে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা হচ্ছে ১৫০৩৪ জন। সমীক্ষা অনুযায়ী, এ পাঁচটি দেশে পড়তে যাওয়া ১৫০৩৪ জন শিক্ষার্থীর গ্রাজুয়েশন এবং পোস্ট-গ্রাজুয়েশন কোর্স সম্পন্ন করতে ৬ বছরে খরচ হবে প্রায় ২৪০,১৪,১০,০৯৮ আমেরিকান ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ১৯২১১,২৮,০৭,৮৪৮ টাকা, অর্থাৎ যা কি না প্রায় ১৯২ বিলিয়ন টাকার সমান। যদি ধরা যায় এদের মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাদের সন্তানদের পড়ালেখার খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করবেন, তাতেও প্রায় খরচ রয়েছে ১২১০ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য যে, উক্ত সমীক্ষার বাদ বাকি দেশে পড়তে যাওয়া প্রায় ৮১৫১ জন শিক্ষার্থীর সম্ভাব্য খরচ এখানে ধরা হয়নি।

দেশ থেকে মেধা পাচার রোধে কার্যকর কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন

Photo_1055এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুল্লাহ বলেন, পূর্বে মেধা পাচারকে যে অর্থে বলা হতো আমার মনে হয় এখন ওই অর্থের গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের এই ছোট্ট দেশে অনেক মেধাবী মানুষ রয়েছে, কিন্তু মেধার যথাযথ মূল্যায়ন বা ব্যবহারে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। আপনি যদি আমাকে বলেন, বিদেশে পড়তে গিয়ে ফিরে না আসাকে মেধা পাচার বোঝায়। আমি বলব এটি একটি ভুল ধারণা। এখন প্রচুর সংখ্যক মেধাবী দেশে আছে এবং আরো তৈরি হচ্ছে। আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জীবন-জীবিকার সংস্থান করাকে মেধা পাচার বলা আমি সমীচীন মনে করছি না; বরং আমি বলব, দেশে মেধার অপচয় হচ্ছে এবং এটি খুবই ভয়ংকর। তাই আমি মনে করি, সর্বপ্রথম দেশে মেধা ও মেধাবীদের জন্য কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা জরুরি। দেশে প্রচুর পরিমাণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে মেধাবীদের কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।

এ প্রসংগে আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই, প্রতিবছর দেশের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষার্জনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। সাথে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ অর্থাৎ হাজার হাজার কোটি টাকা। এটি একটি জাতির জন্য বিশালাকার ক্ষতি। দেশ ও জাতি বঞ্চিত হচ্ছে শানিত মেধার ব্যক্তিদের সেবা থেকে। এ উভয় প্রকার ক্ষতির মেয়াদ যদি আরো দীর্ঘায়িত হয় এবং এটিকে যদি সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা না যায়, তাহলে জাতি হিসেবে আমাদেরকে পিছিয়ে পড়তে হবে।

CBHE (Cross Border Higher Education) আইন পাস হয়েছে। এ আইনের ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে বলে কী মনে করেন Ñএমন প্রশ্নের জবাবে দূরদর্শী শিক্ষাদ্যোক্তা প্রফেসর আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ বলেন, আধুনিকায়নের এ যুগে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা আমরা কেনো হারাব? আমরা কি পারি না ৮/১০ বছর ব্যাপী মেগা পরিকল্পনা নিয়ে এ দেশে বিশ্বমানের ৫/৭টি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে? আমরা কি পারি না ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার মতো দেশের ৪/৫টি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল এদেশে স্থাপন করতে? আমাদের জমি রয়েছে, মানব সম্পদ রয়েছে, প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশ রয়েছে, বিশ্বমানের শিক্ষকও রয়েছে… তাহলে আমরা পারছি না কেনো? আমাদেরকে পারতেই হবে, দেশের মেধা ও অর্থ সম্পদ দেশেই রাখতে হবে এবং দেশকে গড়তে হবে। প্রয়োজন শুধু সাহসী সিদ্ধান্তের।

সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে এর একটি ছোট বিকল্পও রয়েছে। অবশ্যই সেটি হচ্ছে Foreign Collaboration। ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং কানাডার ৫/১০টি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে Franchise Collaboration করে আমরা আমাদের মেধা এবং অর্থ দুটোই কিছুটা হলেও দেশে রাখতে পারি। জাতীয় স্বার্থে Franchise Collaboration এর পথ Open করে দেয়া দরকার। বিদেশের A Grade এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এদেশে আসুক এবং চবৎভড়ৎস করুক। আমরা দেখেছি, দুবাইতে অনেকগুলো বিশ্বমানের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় সফলতার সাথে কাজ করছে। তারাতো পেরেছে, আমরা কেনো পারব না?

প্রফেসর আব্দুল্লাহ আরও বলেন, আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব; আন্তর্জাতিক অঙ্গনের Top Grade এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এদেশে Perform করার সুযোগ দিন। আমি অবশ্যই নিম্নমানের বা বাজে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা বলব না। Top Grade এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের যে দেশেই Collaboration করুক না কেনো, তারা Quality’র সাথে আপোশ করবে না। তারা নিয়মিত Quality control করবে। বাংলাদেশ নিয়ে তারা ভাববে না, তারা ভাববে তাদের Quality নিয়ে। সামান্য বিচ্যুতি ঘটলেই তারা Collaboration বাতিল করবে। শুধুমাত্র Study Center এর Collaboration করে কোনো লাভ হবে না। Franchise Collaboration এর মাধ্যমে তাদেরকে এখানে Operate করার সুযোগ করে দিতে হবে। অর্থাৎ আমি বলতে চাই, CBHE এর কারণে উচ্চশিক্ষা ক্ষতির সম্মুখীন হবে না বরং উচ্চ শিক্ষার গুণাগুণ এবং প্রতিযোগিতা বাড়বে।

উচ্চ শিক্ষার ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কে কিছু বলবেন কি? এ ব্যাপারে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা কী

এমন প্রশ্নের জবাবে দৃঢ় প্রত্যয়ী শিক্ষাবিদ প্রফেসর ইউসুফ আব্দুল্লাহ বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ‘দ্য কমনওয়েলথ অব লার্নিং’ এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও জন ডানিয়েল উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণের ওপর জোর দেন। উচ্চশিক্ষার বেসরকারিকরণ তথা এ বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কন্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দেয়ার জন্য ‘প্রযুক্তিগত রূপান্তরের অঙ্গীকার’ গ্রহণ করতে তিনি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষা তথা উচ্চ শিক্ষাকে মানসম্মত করা এবং এটিকে সম্পদে পরিণত করতে হলে এটি হবে ব্যয়সাপেক্ষ। খরচ হ্রাস করতে চাইলে প্রাপ্তি ও মানের ক্ষেত্রে অনিবার্য ঝুঁকিতে পড়তে হবে।’ জনাব ড্যানিয়েল আরো বলেন, ‘প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশি অর্জন করা যায়, উচ্চমান লাভ করা যায় এবং একই সাথে খরচও কমানো যায়। এটিই একটি বিপ্লব। যা পূর্বে কখনো ঘটেনি।’ তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সফলতার কথা তুলে ধরেন (যেমন ইন্দিরা গান্ধী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়)। তিনি সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত অগ্রগতির উৎকর্ষের উদাহরণস্বরূপ এমআইটি’র উন্মুক্ত শিক্ষামূলক প্রোগ্রামগুলোর কথা তুলে ধরেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় বহু আউট-ক্যাম্পাসের সমন্বয়ে। এমআইটি তাদের আউট-ক্যাম্পাসের কাজকে ত্বরান্বিত করবার জন্য এর পরিপূর্ণ ডিজিটালাইজেশন করেছেন অর্থাৎ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেছেন।

বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের UNDP ও USAID Supported Access to Information Program এর নীতিনির্ধারক উপদেষ্টা, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও ইংলিশ ইন একশন এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক এক সেমিনারে বলেন, Education is going outside the building.

উক্ত দু’জনের সারগর্ভ বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ইংগিত পাওয়া যায়, তা হলো প্রযুক্তির ব্যবহার। এখানে বিল্ডিং বা ভবন মুখ্য বিষয় নয়। বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য শুধুমাত্র ভবনকে আঁকড়ে ধরে থাকলে চলবে না, আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাসমূহ বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী ঘোষণা, একটি স্বপ্ন। এ স্বপ্নের বাস্তবায়নে প্রত্যেককেই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। পুরনো ধ্যান-ধারণা ত্যাগ করে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

সুশিক্ষিত জাতি ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি সম্পর্কে স্বপ্নদ্রষ্টা শিক্ষাদ্যোক্তা প্রফেসর আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ বলেন, সুশিক্ষিত জাতি ও দক্ষ মানবসম্পদ একটি জাতি গঠনের পূর্বশর্ত। আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, সুশিক্ষিত জাতি ও দক্ষ মানবসম্পদ ছাড়া উন্নত জাতিতে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়, পরনির্ভরশীলতা আমাদের কাটবে না। এসব পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।

ফটোক্যাপশন
১. নর্দান ইউনিভার্সিটিকে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি হিসেবে ঘোষণা অনুষ্ঠানের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে ক্রেস্ট প্রদান করেন নর্দান ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ।

২. নর্দান ইউনিভার্সিটিকে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি হিসেবে ঘোষণা অনুষ্ঠানের উদ্ভোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এর চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নানকে ক্রেস্ট প্রদান করেন নর্দান ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ।

৩. নর্দান ইউনিভার্সিটিকে বাংলাদেশ এর ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র জনাব আনিসুল হক কে ক্রেস্ট প্রদান করেন নর্দান ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ।

Comments

comments