হাসেম আলী, জেলা প্রতিনিধিঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার ৭ বছর আগে শুরু করে দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রেললাইন আধুনিকায়নের কাজ।
এ বছরের শুরুর দিকে তা শেষও হয়। এতে উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনায় যুক্ত হবে প্রান্তিক এ জেলার লাখ লাখ মানুষ। এমন আশায় বুক বেধে ছিল এ এলাকার সাধারণ মানুষ।যাতায়াতে দুর্ভোগ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মালামাল পরিবহনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশা করছেন তারা। কিন্তু সবকিছু প্রস্তত হলেও চালু হচ্ছে না ট্রেন।
গত ৩ আগস্ট পঞ্চগড়ে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল উদ্বোধন হবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে এলাকার মানুষ।
কিন্তু ঠাকুরগাঁও রুট উদ্বোধন না করে দিনাজপুর-ঢাকা রুট উদ্বোধন হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন এ এলাকার মানুষ। তাই ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রুটে দ্রুত আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলও করেন ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ জনগণ।
ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম বলেন, সরকার এত কোটি টাকা ব্যয়ে এই রেল লাইনটি ঠিক করলো। কিন্তু যদি রেল চলাচল না করে তাহলে রেললাইন ঠিক করার নামে এতো টাকা নষ্ট করার কি প্রয়োজন ছিল? আর আমাদের স্বপ্ন দেখালো কেন?
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু বলেন, ঠাকুরগাঁও একটি অনুন্নত এলাকা। ব্যবসা ও শিল্পকারখানাসহ সব দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে এ এলাকা। আমরা মনে করেছিলাম রেললাইন চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে এবং এ এলাকায় ব্যবসার প্রসার ঘটবে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে লালমনিরহাট ডিভিশনের ব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, নির্দেশনা পেলে যে কোনো মুহূর্তে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু করবে।
ঠাকুরগাঁও নবাগত জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, আমি এসেই দেখেছি এ জেলার মানুষের প্রাণের দাবি আন্তঃনগর ট্রেন। কি কারণে ট্রেন চালু হলো না সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ট্রেন চালুর জন্য আবেদন করা হবে।
উল্লেখ্য, ৯৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বতীপুর থেকে ভোমরাদহ পর্যন্ত ১০০কি.মি. ও ভোমরাদহ থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত ৫০ কি.মি. ব্রডগেজ লাইন স্থাপনের জন্য কাজ করে যথাক্রমে তমা ও ম্যাক্স কনস্ট্রাকশন। কাজের দীর্ঘসূত্রতা ও নতুন কয়েকটি রেলওয়ে ব্রিজ তৈরির জন্য ব্রডগেজ লাইনে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করতে বিলম্ব হচ্ছিল। কিন্তু ব্রডগেজ লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলেও এই দুই জেলা বরাবরের মতো উপেক্ষিত থেকে যায়।
রেলের পশ্চিম জোনের পাকশী ডিভিশনের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা শওকত জামিল জানান, ভারত থেকে আমদানি করা নতুন কোচ দিয়ে ঢাকা-রাজশাহী-খুলনা রুটে দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করছে। ওই ট্রেন দু’টির পুরনো ইন্দোনেশিয়ান কোচ দিয়ে দিনাজপুর-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর একতা ও দ্রুতযান ট্রেন ব্রডগেজ লাইনে চলাচল করবে। এজন্য ২০টি কোচ প্রস্তুত করা হয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রুটে বাদ দিয়ে দিনাজপুর-ঢাকা রুটে ব্রডগেজ ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এতে এ এলাকার মানুষ যেমন হতাশ হয়েছে তেমনি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করেন এবং এ এলাকার মানুষ রেলমন্ত্রীর কাছে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি দ্রুত মেনে নেয়ার অনুরোধ করেন।
Comments
comments