Download Free BIGtheme.net
Home / জেলার খবর / দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে গণহত্যা দিবসে শহীদদের উদ্দেশ্যে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে গণহত্যা দিবসে শহীদদের উদ্দেশ্যে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

photo_3034

জাহিনুর ইসলাম, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: ১০ অক্টোবর চড়ারহাট গণহত্যা দিবস। ১৯৭১-এর এই দিনে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয় শতাধিক নিরিহ জনতাকে। নির্মম এই গণহত্যার কথা মানুষ ভুলতে পারে নাই। অক্টোবর এলেই এখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।নবাবগঞ্জের পুটিমারা ইউনিয়নের চড়ারহাটে (প্রাণকৃঞ্চপুর) ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নিরীহ সাধারন নারী-পূরুষকে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে একত্রিত করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহতও হয়।সেই শহীদদের গণকবরগুলি সংরক্ষণের জন্য শহীদ পরিবারসহ এলাকাবাসী আজও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।

আহতদের মধ্যে চড়ার হাটের হোমিও চিকিৎসক ডাঃ এহিয়া মন্ডল জানান, ৯ অক্টোবর বিরামপুর উপজেলার আলতাদিঘী নামক স্থানে গরুর গাড়ীতে করে কয়েকজন খাঁন সেনা বিরামপুর ক্যাম্পে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত হামলা করে ৭জন খাঁন সেনাকে হত্যা করে। খাঁন সেনাদের সাথে ২ জন রাজাকারও ছিল। ওই রাজাকাররা খাঁন সেনাদের হত্যা করার খবর বিরামপুর ক্যাম্পে জানায়।খবর পেয়ে ক্যাম্প কমান্ডার একজন মেজর প্রতিশোধ নিতে হিংস্র হয়ে উঠে। তিনি তার ফোর্সদের নিয়ে ৯ অক্টোবর রাতেই পুটিমারা ইউনিয়নের চড়ারহাট(প্রাণকৃঞ্চপুর) ও আন্দোলগ্রাম(সারাইপাড়া) ঘেরাও করে। ১০ অক্টোবর ভোর রাতে ওই গ্রামের নিরীহ সাধারন মানুষদের কাজের কথা বলে চড়ারহাটের একটি স্থানে সাধারন ওই মানুষগুলিকে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এতে ২ জন মহিলাসহ ১৫৭ জন শহীদ হন।

শহীদদের সকলের লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয় নাই। ৯৩ জন শহীদের লাশ সনাক্ত করা হয়েছিল। যার মধ্যে চড়ারহাট (প্রাণকৃঞ্চপুর) গ্রামের ৬১জন এবং আন্দোলগ্রামের (সারাইপাড়া) ৩২ জন। ওই সময় এক কবরে একাধিক শহীদের লাশ দাফন করা হয়েছিল। সেইদিনের ঘটনা ও শহীদদের স্মৃতি আজও তাদের আপনজনদের মাঝে নাড়া দেয়।তিনি বলেন, শহীদ পরিবারগুলির দাবী ছিল গণহত্যা স্থানে একটি স্মৃতি মিনার করে দেয়ার। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর ২০১১ সালে সেখানে একটি স্মৃতি মিনার তৈরীর ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক। মিনারের কাজ শেষ হলে তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দিনাজপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জামাল উদ্দীন আহমেদ। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অবধি দেশপ্রেম জাগাতে নবাবগঞ্জের চড়ারহাট এলাকার সেই নিবেদিত শহীদদের স্মৃতি চির জাগরুক থাক এ দাবী এলাকার সকলের।

এ উপলক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের উদ্দেশ্যে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার উপজেলার পুটিমারা ইউনিয়নের প্রাণকৃঞ্জপুর (চড়া) গ্রামে শহীদ স্মৃতি মিনারের সামনে ওই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।পুটিমারা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আয়োজনে দুপুরে ইউ,পি চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, দিনাজপুর সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাংগাঠনিক সম্পাদক আঃ সবুর, যুগ্ম সম্পাদক খালেকুজ্জামান বাবু,মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী, প্রভাষক এমদাদুল হক ও প্রধান শিক্ষক মরফিদুল হক।

আলোচনার পূর্বে স্মৃতি মিনারে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পুষ্প স্তবক অর্পণ করা হয়। শেষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

Comments

comments