অনলাইন ডেস্কঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যেসব সাঁওতালের নিজস্ব বাড়িঘর নেই, তাঁদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরবাড়ি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোথায় এসব বাড়িঘর তৈরি করে দেওয়া হবে, তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দেওয়া নির্দেশে বলা আছে।
আজ বুধবার (১৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান। এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় কোনো দলীয় কোন্দল ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দলীয় কোন্দলের আভাস পেলে প্রধানমন্ত্রীকে বলতাম। আমি দেখেছি, কেউ ষড়যন্ত্র বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নাসিরনগরের ঘটনায় এখনো তদন্ত চলছে। বেশ কয়েকটি দল কাজ করছে। কী পাওয়া গেল, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা বলা যাবে না।
সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা তারা নিয়েছেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাইলে সাতদিন আগে এই বিষয়ে পুলিশকে জানাতে হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
শিল্প সচিবের মত শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “এটা সাঁওতালদের জায়গা ছিল না। ভূমিদস্যুরা সাঁওতালদেরকে ব্যবহার করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সাঁওতালদের দিয়ে দখল করিয়ে পরে নিজেদের দখলে নেওয়া।”
আমুর বক্তব্যের সূত্র ধরে তিনি বলেন, “গতকাল মাননীয় শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, এটা সুগার মিলের জায়গা, এই জায়গায় পর্যায়ক্রমে আখ চাষ করা হত। সেখানে কিছু আদিবাসী এসে ঘর তুলেছিল, তারা আবার চলেও গিয়েছেন। কালকে পর্যন্ত জানি সেখানে কেউ নাই।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহজ সুরে পরিস্থিতির বিবরণ দিলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপর গুলির ঘটনার পর থেকে সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে।
এদিকে ওই জমি এখন কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুই গজ পর পর সিমেন্টের পিলার দিয়ে তাতে বাঁধা হচ্ছে কাঁটাতার। গত ৯ দিনে এক কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে।
চিনিকল কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার রতন কুমার হালদার জানান, “নিজেদের জমি রক্ষা করতে হলে বেড়া দিতে হবে। তা না হলে দখল হয়ে যায়।”
তবে সাঁওতালদের দাবি অনুযায়ী চিনিকলের জমিতে তাদের থাকতে দেওয়া সম্ভব নয় বলে দুদিন আগে জানিয়ে দিয়েছেন শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
মিলের জমির বাইরে ১০ একর খাসজমিতে ভূমিহীন সাঁওতালদের পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তাতে সাড়া মিলছে না জানিয়ে সোমবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “এখনও তারা বলছে, মিলের জমিতে তাদের জায়গা দিতে হবে। এটা সরকার দিতে পারে না।”
সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। সেই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে তার দখল ফিরে পেতে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা।
এরপর সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে বিরোধপূর্ণ চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেন। গত ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। পুলিশের ভাষ্য, তারা সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায়। ওই ঘটনায় নিহত হন তিন সাঁওতাল, আহত হন অনেকে।
Comments
comments