Download Free BIGtheme.net
Home / ইসলাম / কুরআন তেলাওয়াতের ফজিলত

কুরআন তেলাওয়াতের ফজিলত

অনলাইন ডেস্ক: মহাগ্রন্থ আল কুরআন, যা অবতীর্ণ হয়েছে বিশ্বমানবতার মুক্তির জন্য, সৎ আর সত্যের পথ দেখানোর জন্য। অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি জাহেলি সমাজে কুরআন এনেছিল আলোকময় সোনালি সকাল। আল কুরআন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব। সব ধরনের জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধার এই মহাগ্রন্থ। এটি মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। এর অধ্যয়ন, অনুধাবন ও অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানুষের কল্যাণ। আল কুরআনের বিধান মানবজাতির জন্য চিরন্তন, চিরদিনের, যা অপরিবর্তনীয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আমি আপনার কাছে আল কুরআন এ জন্যই অবতীর্ণ করেছি, যেন আপনি মানুষের সামনে তাদের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ বাণীসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন’ (সূরা নাহল-৪৪)।
পবিত্র কুরআনে আরো ঘোষিত হচ্ছে- নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের ওপর অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতগুলো তেলাওয়াত করেন এবং তাদেরকে কিতাব এবং হিকমত শিক্ষা দেন (সূরা ইমরান-১৬৪)।

আল কুরআন মহান বিশ্ব নিয়ন্তার এক মহা দান, যা পাঠ করলে হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রশান্তি। আত্মায় ঢেউ খেলে যায় এক ঐশী নূরের, যা পাঠ করলে হতে হয় মোহগ্রস্ত, লোভাতুর, এক আবেগ যেন ছাড়তে চায় না মনকে। কী মধুর সুর! কী মায়াবী এক টান। প্রেম আর বিশ্বাস নিয়ে যখন কোনো মুমিন কুরআন পাঠ করে বা শ্রবণ করে, তখন কি সে তার নিজের মধ্যে থাকে? তার অস্তিত্ব, তার হৃদয় কোথায় দোল খায়? সে কি বলতে পারে? নিশ্চয় নয়। আল কুরআন হচ্ছে এক মোহনীয় সুরের মায়াবী টান, যা পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষায় নেই। নেই পৃথিবীর কোনো সুরে।

তাই তো আরব্য ইতিহাসে পাওয়া যায় রাসূল সা: এবং সাহাবায়ে কেরাম রা: কুরআন পাঠ করলে মক্কার কাফেরেরা চুপিসারে এসে তা শুনত। আর বিমোহিত হতো। কিন্তু তাদের কপালে হেদায়েতের মতো মহান সম্পদ জোটেনি। হজরত উমর ফারুক রা: তো তার বোনের তেলাওয়াত শুনেই পাগল হয়েছিলেন এবং নাঙ্গা তরবারি হাতে রাসূল সা:-এর দরবারে এসে মুসলমান হয়েছিলেন।কুরআন তেলাওয়াতকারীর ফজিলত সম্পর্কে রাসূল সা: বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ যে আল কুরআন স্বয়ং শেখে এবং অন্যকেও শেখায়’ (বুখারি)।

যেহেতু কুরআনে ইসলামের মূল নীতিমালা এবং প্রচার-প্রসারের তাগিদ এসেছে বারবার, সেহেতু কুরআনের শিক্ষা লাভ ও শিক্ষাদান এবং তা তেলাওয়াত করা শ্রেষ্ঠ ইবাদত হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এখানে একটি কথা বলতেই হয়, আরবি ভাষীরা তেলাওয়াতের সাথে সাথে কুরআনের অর্থ তথা তার মাঝে বর্ণিত হুকুম-আহকামকে জানা, বোঝা ও তার ওপর আমল করা অবশ্যই কর্তব্য।

আর সাধারণ জিকির থেকে কুরআন তেলাওয়াত অবশ্যই বেশি মর্যাদাশীল ও ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পড়ানো এবং তেলাওয়াতের কারণে আমার কাছে কিছু চাইতে পারল না, আমি তাকে প্রার্থনাকারীর চেয়ে বেশি দান করি।’

অপর হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: বলেন, ‘যে হৃদয়ে আল কুরআনের কোনো অংশ নেই, সে হৃদয় একটি বিরান গৃহের মতো।’ তেলাওয়াতকারী সম্পর্কে আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর পড়বে তাকে আল্লাহতায়ালা দশটি নেকি দান করবেন’ (বায়হাকি)। এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি আল কুরআনের মধ্যে এমন সব নাজিল করেছি, যা বিশ্ববাসীর জন্য রোগমুক্তি ও রহমতস্বরূপ’ (বনি ইসরাইল-৮২)।

এ প্রসঙ্গে রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা কুরআন তেলাওয়াতকারীদের আহ্বান করবেন এবং বলবেন, তোমার কুরআন তেলাওয়াত করো এবং মর্যাদার আসনে উন্নীত হতে থাকো। নিশ্চয়ই তোমার মর্যাদার আসন হবে তোমার তেলাওয়াতকৃত আয়াতের শেষ প্রান্তে’ (মুসলিম, তিরমিজি)।

বস্তুত কুরআন পঠন ও পাঠনে বিশেষ মনোযোগী হওয়া অবশ্যই কর্তব্য। কেননা, কুরআন কারিমের মাধ্যমেই মানবজাতি মনজিলে মাকসুদে পৌঁছার পথ সুগম করতে পারে। এর মাধ্যমেই মুমিন পায় তার স্রষ্টার পরিচয়। জানতে পারে প্রিয় রাসূল সা:-এর আদর্শকে। বুঝে নিতে পারে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্যকে। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত ও এর ওপর আমল করা।

Comments

comments