তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক: প্রস্তাবিত ইন্টারনেটের মূল্যসীমা কার্যকর হলে ঢাকায় ইন্টারনেটের দাম না কমলেও গতি বাড়বে। একইসঙ্গে ঢাকার বাইরে গতি বাড়বে তবে কমবে দাম। ঢাকায় বর্তমানের চেয়ে গতি দ্বিগুণের বেশি বাড়তে পারে। আর ঢাকার বাইরে বর্তমানের অর্ধেক দামে মিলতে পারে ইন্টারনেট। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির জমা দেওয়া প্রস্তাবনায় এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
আইএসপিএবি সূত্রে জানা গেছে, একইসঙ্গে আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও এনটিটিএনগুলোর ব্যান্ডউইথ, পরিবহন ও সেবাচার্জে ‘সিলিং’ করে না দিলে গ্রাহকপর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানো যাবে না। এ কারণে আইএপিএবি তাদের প্রস্তাবনায় আইআইজি ও এনটিটিএন-এর চার্জের ওপর সিলিং করার প্রস্তাব দিয়েছে। যা জমা রয়েছে কমিশনে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়ে গ্রাহকপর্যায় থেকে বলা হচ্ছে। এর আগে একবার সরাসরি যে ইন্টারনেটের দাম কমানো হয়েছিল, তা ছিল গ্রাহকদের আন্দোলনের ফসল। সরকারও বিভিন্ন সময় বলে আসছে ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলে আসছেন, তিনি ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে কাজ করছেন। আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদে পলক বলেছেন, সরকার ইন্টারনেটের মূল্যসীমা বেঁধে দিতে কাজ করছে। এই কাজ বাস্তবায়ন করা গেলে ইন্টারনেটের উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা বেঁধে দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে গ্রাহকরা আগের চেয়ে কম মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
এদিকে ইন্টারনেটের দাম না কমলেও একাধিকবার দাম কমানো হয়েছে ব্যান্ডউইথের। ২০০৪ সালের ৭২ হাজার টাকার ব্যান্ডউইথ (এক মেগা)-এর দাম কমতে কমতে এখন ৬২৫ টাকা হলেও সেই অর্থে ইন্টারনেটের দাম কমেনি। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, ইন্টারনেটের দাম সেই অর্থে খুব একটা না কমলেও গতি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েকগুণ। মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের হারও বেড়েছে।
জানা গেছে, সাবমেরিন ক্যাবল ও আইটিসির (ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল) মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ আনা থেকে শুরু করে গ্রাহকপর্যায়ে ইন্টারেনেট ব্যবহারে মোট ১৬টি খাত জড়িত থাকে। এরমধ্যে একটি হলো ব্যান্ডউইথের দাম। বারবার ব্যান্ডউইথের দাম কমানো হলেও অন্য খাতগুলোর চার্জ না কমানোয় ইন্টারনেটের দাম যেখানে ছিল, সেখানেই রয়েছে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা প্রতিটি খাতের সেবাচার্জ আনুপাতিক হারে না কমালে ব্যান্ডউেইথের দাম শূন্য করে ফেলা হলেও ইন্টারনেটের দাম কমানো সম্ভব হবে না। তারা মনে করেন, ১৬টি খাতের মধ্যে অন্তত ৩টির দাম ও সেবা চার্জ কমানো হলে ঢাকায় ইন্টারনেটের দাম কমানো না গেলেও গতি বাড়ানো যাবে। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে অন্তত ৫০ শতাংশ কম দামে বেশি গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তিনটি খাতের মধ্য অন্যতম হলো আইআইজি, এনটিটিএন ও ব্যান্ডউইথ।
আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, ‘আইআইজি ও এনটিটিএন কোম্পানিগুলোর চার্জ সিলিং করে না দিলে দেশের ইন্টারনেট খাত অবৈধ আইএসপি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাবে।’ তিনি মনে করেন, ‘চার্জ সিলিং করে না দিলে এনটিটিএন কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া ব্যবসাও ঠেকানো যাবে না। বেশি সংখ্যক লাইসেন্স দিয়েও একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না।’ এ কারণে তিনি সিলিং পদ্ধতির পক্ষে মতো দেন।
আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘সব পক্ষের চার্জ আনুপাতিক হারে কমানো হলে ঢাকায় হয়তো ইন্টারনেটের দাম কমানো যাবে না তবে একই দামে গতি এবং ডাটার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে বর্তমানে ১০০ টাকায় যে এক এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট পাওয়া যেত, আগামী দিনে ওই একই টাকায় ২ এমবিপিএস পাওয়া যাবে।’ ইমদাদুল হক বলেন, ‘এতে ইন্টারনেট সেবার মান আরও ভালো হবে।’ তিনি জানান, ‘ঢাকায় এক এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ আমরা ১ হাজার টাকায় দিতে পারলেও ঢাকার বাইরে তা আমাদের বিক্রি করতে হয় ৪ হাজার টাকায়। এরমধ্যে ব্যান্ডউইথের ট্রান্সমিশন চার্জ বাবদই আমাদের খরচ করতে হয় ৩ হাজার টাকা। এ কারণেই আমরা বলছি, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর চার্জ সিলিং করে দিলে কেউই অর ইচ্ছে মতো চার্জ নিতে পারবে না। ফলে ঢাকার বাইরে বর্তমান খরচের প্রায় ৫০ শতাংশ কমে আমরা গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবা দিতে পারব।’
Comments
comments