অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তাঁর সম্মানে দেশটির রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া নৈশভোজে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী ৭ এপ্রিল সফরের প্রথম দিনই নয়াদিল্লির রাইসিনা হিলে রাষ্ট্রপতি ভবনে এ ভোজ হওয়ার কথা রয়েছে। সফরকালে রাষ্ট্রপতির আতিথেয়তায় রাষ্ট্রপতি ভবনেই থাকবেন শেখ হাসিনা।
ইতিমধ্যে আমন্ত্রণের চিঠি মমতার কাছে পাঠিয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন। তবে, নৈশভোজে মমতা উপস্থিত থাকবেন কি-না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময়ে ফের আলোচনায় এল তিস্তা। আদৌ তিস্তা চুক্তি হবে-কি না, তা যেমন বলা যাচ্ছে না। তেমনি নৈশভোজে গেলেও হাসিনা-মমতার আলাপ হবে কি-না তা বলতে পারছেন না কেউ।তবে, ভারত সকার চাইছে চুক্তি না হলেও অন্তত হাসিনা-মমতা বৈঠক হোক।
বিশ্লেষকরা বলছেন ওই নৈশভোজে এলে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা এবং কথা হতে পারে মমতার। আর এতে প্রায় ছয় বছর ধরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে যে জটিলতা রয়েছে তার জট খুলতে পারে। ‘বাংলাদেশের বন্ধু’ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বঙ্গবন্ধুকন্যার সমর্থনে এগিয়ে এসে দিল্লিতে মমতাকে ডেকে পাঠাবেন এটাই ঢাকার কূটনৈতিক মহলের প্রত্যাশা ছিল। সেটাই করলেন তিনি।
কিন্তু শিলিগুড়ি সফরে থাকা মমতার ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, এখনও পর্যন্ত ৮ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি যাওয়ার কোনো সূচি নেই। সম্ভবত তিনি যাবেনও না। তবে যদি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রণব মুখার্জি ফোন করেন সেক্ষেত্রে মমতা কী সিদ্ধান্ত নেন সেটাই দেখার বিষয়।
মমতার আপত্তির কারণে ঝুলে আছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যেম অনুযায়ী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তির ব্যাপারে রাজি হলেও বাধ সেধেছেন মমতা। সর্বশেষ তথ্য মতে এ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মমতা এখনো একমত হননি।
পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বাদ দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করবেন না মমতা। দৃঢ়তার সঙ্গে একথা তিনি সম্প্রতি ভারতের এক টেলিভিশন চ্যানেলেও বলেছেন। সে সময় মমতা বলেছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক অটুট রয়েছে। তবে রাজ্যের স্বার্থহানি হয়, এমন কোনো কাজ তিনি করবেন না।
আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি করতে সময়ে সময়ে দিল্লির প্রতি আহ্বান কিরে আসছে বাংলাদেশ। বরাবরই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসলেও এখনো চুক্তিটি করেনি ভারত।
সেই টেলিভিশনের আলোচনায় মমতা ব্যানার্জির অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গকে এড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করতে চাইছে। আমি তো শুনছি ২৫ মে নাকি বাংলাদেশে গিয়ে তিস্তা চুক্তি হবে। অথচ আমি এখনো কিচ্ছু জানি না। তোমরা যদি সবকিছু রেডি করে আমাকে বলো স্ট্যাম্প মারার জন্য, স্যরি! আমাকে রাজ্যের স্বার্থ দেখতে হবে। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। বাংলাদেশকে যতটা হেল্প করার আমি করব, তবে রাজ্যকে বাঁচিয়ে বলে মন্তব্য করেন মমতা।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও মমতার আপত্তিতে সেবার তা আটকে যায়। বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব তখনকার সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এরপর বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ২০১৫ সালে ঢাকা এলেও তিস্তার জট খোলেনি। সেবারও আশ্বাস দিয়েই বিদায় নিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
Comments
comments