আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) পরিচালক জেমস কোমিকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মঙ্গলবার (০৯ মে) স্থানীয় সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এফবিআইয়ের পরিচালকের পদ থেকে জেমস কোমিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
কোমিকে দেওয়া চিঠিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসের সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়েছেন। সেই সুপারিশ হলো, আপনি (কোমি) আর পরিচালক হিসেবে এফবিআইকে কার্যকরভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য নন। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস সর্বোচ্চ পর্যায়ের শৃঙ্খলা, সততা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ কারণেই ওই পদে নতুন মুখ প্রয়োজন।
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ইমেইলের বিষয়ে তদন্তকে কেন্দ্র করে কোমিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত সপ্তাহে কংগ্রেসের কাছে দেয়া বক্তব্যে কমি ত্রুটিপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার কোমি যখন লস অ্যাঞ্জেলেসে এফবিআই এজেন্টদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন একজন এসে তার হাতে একটি নোট ধরিয়ে দিয়ে যান। সেখানেই জানানো হয়, তার আর চাকরি নেই। বিবিসি লিখেছে, ওই নোট পড়ে ৫৬ বছর বয়সী কোমি হেসে ওঠেন, প্রথমে তিনি ওই চিরকুটকে রসিকতা ভেবেছিলেন।
আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটনজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, কোমির বরখাস্তের বিষয়ে তাঁদের আগে থেকে কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি।
তবে ডেমোক্র্যাটরা কোমিকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে যড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের প্রচারণায় রাশিয়ার যোগসাজশের অভিযোগ তদন্ত করছিল এফবিআই। এ কারণেই কোমিকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মার্কিন রাজনীতিবিষয়ক সংবাদ সংস্থা পলিটিকোর প্রতিবেদক ড্যানিয়েল লিপম্যান বিবিসিকে বলেন, কোমির পরিবর্তে কে আসবেন, তার ওপরে অনেক কিছুই নির্ভর করছে। ওয়াশিংটনের সবাই এখন ভাবছে, এফবিআইর নতুন পরিচালক কি ট্রাম্পকে জবাবদিহির মুখে নিতে পারবেন এবং তাঁর রুশ সম্পর্কের অভিযোগের বিষয়ে কি একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করতে পারবেন? যদি এখন ট্রাম্পের নিজের কোনো লোককে বসানো হয়। তাহলে অনেক আমেরিকান এখন এফবিআইকে যতটা অবিশ্বাস করে, তার চেয়ে আরো বেশি করবে।
জেমস কোমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা দলের সাথে রাশিয়ার যোগাযোগের বিষয়ে একটি তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনের কিছুদিন আগে হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল কেলেঙ্কারির বিষয়ে নতুন তথ্য দিয়ে তিনি ব্যাপক আলোচিত হন। যদিও পরবর্তীতে সেটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল না বলে প্রমাণিত হয়। সেসময় ডেমোক্রেটরা কড়া সমালোচনা করে। কিছুদিন আগে মিসেস ক্লিনটনও তার পরাজয়ের পেছনে কোমির সেই ভূমিকাকে একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, জেমস কোমি এফবিআইয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে। এফবিআইয়ের পরিচালকের পদের মেয়াদ থাকে ১০ বছর। ৫৬ বছর বয়সী কোমি চার বছর দায়িত্ব পালনের পর বরখাস্ত হলেন। আরো ৬ বছর তার এফবিআই প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল।
Comments
comments