বাংলাদেশ অনলাইন ডেস্কঃ দাম বাড়ছে প্যাকেটজাত ভোজ্য ও খোলা শিল্প লবণের। কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে লবণের প্রয়োজন হবে। তাই বাজার সামাল দিতে জরুরি ভিত্তিতে দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ভোজ্য লবণের দাম। দাম নিয়ন্ত্রণে এখন কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হলে চিনির দামে লবণ বিক্রি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বর্তমানে খোলাবাজারে কোম্পানিগুলোর প্যাকেটজাত লবণ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন প্রস্তাবে প্রতিকেজি লবণের দাম ২ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বাড়ানার কথা বলা হয়।
লবণের সংকট ও দাম বাড়ার কথা বলে লবণকল মালিকরা প্রতি সপ্তাহেই লবণের দাম বাড়িয়ে নোটিশ দিচ্ছেন সরকারকে।
গতকাল বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে লবণের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সদস্যরা। সেখানে দ্রুত লবণ আমদানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানায়, লবণের দাম নিয়ে এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়। এর প্রেক্ষিতে লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। তাছাড়া দাম বৃদ্ধির বিষয়টি দেখার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়। ওই কমিটি লবণের দাম বাড়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে।
আগামী ৬ সেপ্টেম্বর দ্রব্যমূল্য নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। যেখানে বিশেষ গুরুত্ব পাবে লবণের বর্তমান দাম।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে এসিআই কম্পানির প্রতি কেজি ‘এসিআই পিউর’ লবণের প্যাকেটের দর ছিল ৪০ টাকা। গত সোমবার কম্পানিটির বিজনেস ডিরেক্টর মো. কামরুল হাসান বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনকে এক চিঠিতে বলেছেন, দেশে ক্রুড লবণের সংকট দেখা দিয়েছে এবং দামও অনেক বেড়েছে। এ অবস্থায় আগের খুচরা মূল্যে এখন আর লবণ বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। তাই তাঁরা লবণের কেজি ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা করতে বাধ্য হয়েছেন। সুপার ক্রিস্টাল সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজও তাদের লবণের কেজি ৪২ টাকা নির্ধারণ করে তা জানিয়েছে ট্যারিফ কমিশনকে।
গত মঙ্গলবার কনফিডেন্স সল্টের তরফ থেকে ট্যারিফ কমিশনকে বলা হয়েছে, তারা ৪০ টাকা কেজি দরে লবণ বিক্রি করবে। এত দিন কনফিডেন্সের প্রতি কেজি লবণের দাম ছিল ৩৮ টাকা। কনফিডেন্সের তরফ থেকেও দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ক্রুড লবণের সংকট ও দাম বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। তবে দাম বাড়াতে পূবালী সল্ট সবার চেয়ে এগিয়ে।
দুই সপ্তাহ আগে বিভিন্ন কারখানা যখন লবণের কেজি ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা নির্ধারণ করছিল, তখনই পূবালী সল্ট তাদের ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেট পদ্ধতিতে পরিশোধন করা লবণের দাম এক লাফে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা করার প্রস্তাব করেছে ট্যারিফ কমিশনে।
গত ২১ জুন মোল্লা সল্ট (ট্রিপল রিফাইন্ড) ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) মো. আব্দুল মান্নান ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে প্রয়োজনের তুলনায় অপরিশোধিত লবণ কম উৎপাদন হওয়ায় কাঁচামালের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এবং ইহার মূল্য মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যাহার ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে প্রতি বস্তা ৭৫ কেজি হিসেবে মাঠপর্যায়ে প্রতি বস্তা অপরিশোধিত লবণের দাম ১,২৫০ টাকা এবং কারখানা পর্যন্ত পরিবহন ব্যয় ও লেবার (শ্রমিক) খরচ আরো ১৫০ টাকা। এমতাবস্থায় আমাদের উৎপাদিত ভোজ্য লবণের দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঈদের আগেই ভারত থেকে লবণ আমদানি শুরু হবে। এর পরে প্রয়োজন হলে আরো লবণ আমদানির সুযোগ দেওয়া হবে।
Comments
comments