Download Free BIGtheme.net
Home / আন্তর্জাতিক / ওবামাকে লালগালিচা সংবর্ধনা না দেওয়ায় চীনের প্রতি মার্কিন হুঁশিয়ারি

ওবামাকে লালগালিচা সংবর্ধনা না দেওয়ায় চীনের প্রতি মার্কিন হুঁশিয়ারি

Photo_2537

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলমান জি-টুয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে রীতিমতো নাজেহাল হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। অন্য নেতাদের লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হলেও আমেরিকার বারাক ওবামাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়নি। এমনকি চীনের হ‌্যাংঝু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশটির কর্মকর্তাদের বাজে ব্যবহারের সম্মুখীন হন বারাক ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ওবামা।

তিনি বলেছেন, বারাক ওবামা বলেন, চীনের উত্থানকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করলে বেইজিংকে এর পরিণাম ভোগ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে বারাক ওবামার একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন সিএনএনের সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়া। রবিবার টেলিভিশনে প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেন, যখন নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যু সামনে আসে, আপনি যদি সমুদ্রসীমা বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, তাহলে আপনি ফিলিপাইন বা ভিয়েতনামের চেয়ে বড় দেশ হতে পারেন; কিন্তু আপনি পেশীশক্তি প্রদর্শন করতে পারেন না। আপনাকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে।

বারাক ওবামা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক পরিসরে চীনের কাছ থেকে বৃহত্তর দায়িত্বপূর্ণ আচরণ প্রত্যাশা করে।

তিনি বলেন, শুধু নিজ জনগণের জন্যই নয়, বরং ব্যাপক পরিসরে আন্তর্জাতিক সমস্যা ও সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা ইবোলার মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় চীনের কাছ থেকে আরও দায়িত্বপূর্ণ আচরণ প্রত্যাশিত। কার্বন নিঃসরণ কমাতে শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের কাছে পরিকল্পনা পেশ করে দুই দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পেশ করা প্রস্তাব সম্পর্কে ওবামা বলেন, আমি মনে করি ইতিহাস এর মূল্যায়ন করবে।

চীনের আচরণ সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরের মতো বিষয়গুলোতে যখন আমরা তাদেরকে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করতে দেখি অথবা কিছু ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক নীতিতে এমনটা দেখি এসব ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান বেশ দৃঢ়। আমরা তাদেরকে ইঙ্গিত দিয়েছি যে, তাদেরকে এর পরিণাম ভোগ করতে হবে।

চীনে জি-টুয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাই, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মাইকেল তেমার, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’সহ বিশ্বনেতাদের লালগালিচা সংবর্ধনা দেয় বেইজিং। অথচ এর ব্যত্ক্রিম ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

বারাক ওবামা যখন চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর হ্যাংঝু বিমানবন্দরে পৌঁছেন, তখন তাকে মোটেও অভ্যর্থনা জানায়নি চীনা কর্তৃপক্ষ। বরং পরোক্ষভাবে চীনা কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়েন তিনি। স্বীকার হন উগ্র চীনা জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির। লালগালিচা তো নয়ই, তাকে বিমান থেকে নামার জন্য রোলিং স্টেয়ারকেইজ (আলাদা সিঁড়ি) দেয়ার মতো কূটনৈতিক শিষ্টাচারও দেখানো হয়নি। এ নিয়ে চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমেরিকান কর্মকর্তাদের বিবাদও হয়েছে। এ সময় বিমানবন্দরের টারমাকে ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইসের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন একজন চীনা কর্মকর্তা।

জানা গেছে, হ্যাংঝুতে ওবামাকে বহনকারী বিমান ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ অবতরণের অল্পক্ষণ পর গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য নির্ধারিত একটি স্থানে দড়ির বেড়া টপকে ওবামার গাড়িবহরের দিকে রওনা হন রাইস। এ সময় একজন চীনা কর্মকর্তা তাকে বাধা দেন। তখন তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি বেধে গেলে আমেরিকার সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা দুজনের মাঝে এসে দাঁড়ান।

ওই চীনা কর্মকর্তার কথা স্পষ্টভাবে শোনা গেলেও রাইসের কথা আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এর ডানার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের রেকর্ডে স্পষ্ট হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে ওই চীনা কর্মকর্তার নামও জানা যায়নি। এরপর হোয়াইট হাউসের একজন প্রেস কর্মকর্তার সঙ্গেও বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন ওই চীনা কর্মকর্তা। ওবামা বিমান থেকে নামার সময় কোথায় দাঁড়াতে হবে, তা বিদেশি সাংবাদিকদের দেখিয়ে দিচ্ছিলেন হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা। এ সময় ওই চীনা কর্মকর্তা রেগে গিয়ে ইংরেজিতে হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তাকে নির্দেশ করে বলেন, এটি আমাদের দেশ। এটি আমাদের বিমানবন্দর।

এদিকে, আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস স্বীকার করেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামাকে স্বাগত না জানানো এবং চীনা কর্মকর্তার শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণে তিনি বিরক্ত হয়েছেন। রাইস সাংবাদিকদের বলেন, ‘যা হয়েছে, তা ধারণাতীত।’

বারাক ওবামা অবশ্য এ ব্যাপারে কূটনৈতিক উত্তর দিয়েছেন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বহরের আকার থেকে চীন হয়তো হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। এ নিয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস স্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট ওবামাকে স্বাগত না জানানোর কারণে চীনের ওপর তিনি বিরক্ত হয়েছেন। সাংবাদিকদের রাইস বলেন, ‘যা হয়েছে তা ধারণাতীত।’

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং মার্কিন কর্মকর্তারা চীন পৌঁছানোর পর যে ধরনের অভ্যর্থনা পেয়েছেন তা খুবই বিবর্ণ।

সব মিলিয়ে এই লালগালিচা সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের টানাপোড়েন আরো জোরালো হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে চীনের প্রতি ‘পরিণাম ভোগ করার’ মার্কিন হুঁশিয়ারিতে। সূত্র: সিএনএন।

Comments

comments