মেহেদী হাসান সোহাগ, মাদারীপুর: মাদারীপুর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার ১নং পুলিশ ফাঁড়ি পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুুরে প্রেসক্লাবের সামনে এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ।মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ, ডিসি‘র বাসভবন ঘেরাও, স্মারক লিপি দিয়েছে এলাকাবাসী। পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের বাসভবন ঘেরাও করে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অভ নেচার, মাদারীপুর পরিবেশ রক্ষা কমিটি ও আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশনের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে প্রভাবশালী একটি মহল নিজেদের স্বার্থে এই পুকুর ভরাট শুরু করেছে। অনতিবিলম্বে এ পুকুর ভরাট বন্ধ না হলে বৃহৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা। এবং বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, ফ্রেন্ডস অভ নেচারের নির্বাহী পরিচালক রাজন মাহমুদ, আসকের সভাপতি রেজাউল হক রেজন।
পরে আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসক কালাম উদ্দিন বিশ্বাসের বাস ভবন ঘেরাও করে। এ সময় শরীয়তপুর-মাদারীপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুদ্ধরা।
দুপুর পৌনে ৩টার দিকে পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, পরিবেশবাদীসহ এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে পুকুর ভরাট বন্ধের দাবীতে স্মারকলিপি দেন। এ সময় জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা উপস্থিত না থাকায় স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসকের অফিস সহকারী মেজবাহ উদ্দিন।
এ ব্যাপারে পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ জানান, শহরের পুরান বাজারের লঞ্চঘাট এলাকায় পুকুরটি অবস্থিত। দুই একর তিন শতাংশ জমির এই পুরোনো ঐতিহ্যবাহী পুকুরের মালিক জেলা প্রশাসন। পুকুরটি ভরাটের পাঁয়তারার বিষয়টি টের পেয়ে এটি রক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে গত এক বছরে জেলা প্রশাসককে তিন দফা চিঠি দিয়েছি। অথচ গত মঙ্গলবার সকাল থেকে খননযন্ত্রের একটি পাইপ দিয়ে পুকুরে বালু ফেলা হচ্ছে। কিন্তু জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন বিশ্বাস কয়েক কোটি টাকা মূল্যের এই পুকুরটি বালু দিয়ে ভরাট বন্ধের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বর্তমানে ভরাট চললেও তিনি অজ্ঞাত কারণে চুপ করে বসে আছেন। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। তিনি রাষ্ট্রের কর্মকর্তা হিসেবে কেন রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করছেন না, বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ।
পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অভ নেচারের নির্বাহী পরিচালক রাজন মাহমুদ জানান, পুকুরটি ভরাট হলে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারও কোটি কোটি টাকার সম্পদ হারাবে। আমি পুকুরটি অবৈধভাবে ভরাটের নিন্দা জানান। সেই সাথে প্রশাসনকে আহবান করবো, যেন অচিরেই বালু দিয়ে ভরাট কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।
আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশনের সভাপতি রেজাউল হক রেজন জানান, মাদারীপুরে দিন দিন পুকুর জলাশয় কমে আসছে। যদি এভাবে পুকুর ভরাট হয়ে যায়, তাহলে এক সময় কোন জলাশয় পাওয়া যাবে না। এই পুকুরটি সরকারী, কেন জেলা প্রশাসক সেটি রক্ষার জন্য কাজ করছেন না। বিষয়টি দুঃখজনক।’
উল্লেখ্য, একশ’ বছর আগের পুরানো এ পুকুরটিতে শহরের লঞ্চঘাট, কালিমন্দির, কর্মকারবাড়ীর লোকজন, ১নং পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন তাদের প্রয়োজনীয় কাজ করে আসছে। পুকুরটি ভরাট হলে পানি সংকটের পাশাপাশি মারাত্মক সমস্যার সম্মুখিন হবেন তারা। তিনদিন ধরে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত পুকুরটি ভরাট করা শুরু হলেও তা বন্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন।
Comments
comments