আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মায়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা অন্তত ১৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। রবিবার রাতে রাখাইনের মংডুর উত্তরাঞ্চলে নাফ নদীতে এই ঘটনা ঘটে। সোমবার সকালের দিকে নদীর তীরে এসব নিহতদের মধ্যে কয়েকটি শিশু এবং একজন নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এরমধ্যে একটি শিশু মাটিতে এমনভাবে পড়েছিল যার সঙ্গে গত বছরের ২ সেপ্টম্বরের সিরিয়ার শরণার্থী শিশু আইলান কুর্দির মরদেহের সাদৃশ্য পাওয়া গেছে। শিশু হত্যার এই বিভৎস চিত্র দেখে অনেকেই মায়ানমারের হাত থেকে রোহিঙ্গা শিশুদের উদ্ধারে দেশটিতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপেরও দাবি জানিয়েছেন।
পালিয়ে আসা ওই মানুষদের জন্য কোনো আশ্রয় ছিল না কোথাও। পৃথিবীর কোথাও জীবিত অবস্থায় যখন আশ্রয় নেই তখন বুঝি কাদামাটিতেই শিশুটি খুঁজে নিল ‘অনিচ্ছুক’ এক আশ্রয়। রোহিঙ্গা ভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ১৫ জনের বেশি লোককে হত্যা করা হয়েছে এবং দুই নৌকাভর্তি লোকজন নিখোঁজ রয়েছে। নিহতেরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছিলেন। নাফ নদীর তীর থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।
উত্তর মংডুর এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এই শিশুদের দোষ কী? কেন এই নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা। কেন এভাবে এই নিষ্পাপ শিশুদের লাশ দেখতে হচ্ছে? ভুক্তভোগী অধিকাংশ মানুষই উত্তর মংডুর রাইমবালি গ্রামের বাসিন্দা। ৯ অক্টোবর থেকে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে মংডুর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত ২৫০ জনকে হত্যা করেছে দেশটির বাহিনী যারা বিভিন্ন সময় নাফ নদী পার হওয়ার চেষ্টা করেছিল।
কাদায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা শিশুটির মুখচ্ছবিতে ভেসে উঠছে শিশু আয়লান কুর্দির মুখ। সিরিয়ান এই শিশুটি বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে উঠেছিল। পুরো বিশ্বকে জাগিয়ে দিয়েছিল ওই একটি ছবি। ভূ-মধ্যসাগরের তীরে ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর ওই শিশুটির লাশ পড়ে ছিল।
গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশের মংডু এবং পার্শ্ববর্তী রাতেডং শহরের তিনটি চৌকিতে অজ্ঞাত পরিচয়ধারীদের হামলায় ১৩ জন সীমান্তরক্ষী নিহত হয়। এ ঘটনার জন্য রোহিঙ্গা মুসলমানদের অভিযুক্ত করে তাদের গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, অভিযানের নাম করে মায়ামার সেনাবাহিনী, বিজিপি ও পুলিশের নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানা হচ্ছে। তারা নারীদের ধর্ষণ, হত্যা এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
এ পর্যন্ত অন্তত ২৫০জন রোহিঙ্গা নিহত, সহস্রাধিক গ্রেপ্তার এবং বহু নারী ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
Comments
comments