অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যায় এত স্বল্প সময়ে এত ব্যাপক সংখ্যক মানুষ হত্যা করা হয়েছে যা সংখ্যা দিয়ে গণনা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা হিসেব করি, কিন্তুু সংখ্যা দিয়ে এটা হিসেব করা যায়না। কত বাবা-মা, ভাই-বোনেরা জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন। যেভাবে এদেশে গণহত্যা চলেছিল পৃথিবীর খুব কম দেশেই আছে- যে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অপারাধ কি ছিল? অপরাধ ছিল স্বাধীনতা আদায়ের সংগ্রাম করা। জনগণের মতামত উপেক্ষা করে মিলিটারি ডিক্টেটররা এদেশ চালাতে চেয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জানতেন যে এদেশকে বাঁচাতে হলে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে, ঐ দারিদ্রের হাত থেকে বাঁচাতে হলে, এদেশের স্বাধীনতা একান্তভাবে জরুরী। তাইতো তিনি নিজের সমগ্র জীবনটা দিয়ে গিয়েছিলেন এদেশের মানুষের কল্যাণে।
আলোচনায় বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের পুত্র সাংবাদিক শাহীন রেজানুর, শহীদ চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আলিম চৌধুরীর কন্যা ড. নুজহাত চৌধুরী শম্পা অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভায় প্রারম্ভিক বক্তব্য প্রদান করেন। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভা পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যাদের সাজা হয়েছে তারাই এদেশে মন্ত্রী হয়েছিল। তাদের হাতে ছিল আমাদের শহীদদের রক্তে রঞ্জিত স্বাধীনতার পতাকা। আমাদের সেই পতাকাকে কতটা অপমান করা হয়েছিল এদের হাতে সেই পতাকা তুলে দিয়ে। কাজেই এই রাজাকার বাহিনীর হাতে যারা এই পতাকা তুলে দিয়েছিল। তারাও সমান অপরাধী। যুদ্ধারপরাধীদের যেমন বিচার হয়েছে তেমনি এদের বিচার ইনশাল্লাহ বাংলার মাটিতে একদিন হবেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময় এসে গেছে আমাদের দেশবাসীকে আজকে সোচ্চার হতে হবে। কারণ, তারাও এদেশের স্বাধীনতা চায় না। বাংলাদেশের মানুষের যখন উন্নতি হয়, যখন তারা ভালো থাকে, তখন বোধ হয় তাদের (যুদ্ধাপরাধী চক্রের) ভালই লাগে না। শহীদ পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণ ও বক্তৃতা শোনার পরে কারো আর বক্তৃতা দেয়ার মন মানসিকতা থাকে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা যে কথাবার্তা বলেছেন আর আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী যে ভবিষ্যদ্বাণী এদেশের জন্য করে গেছেন আমাদের চলার পথে এগুলো পাথেয় হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতাসহ সম্ভ্রমহারা ২ লাখ মা-বোনের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ ছিল, শুধুমাত্র কিছুসংখ্যক লোক ছাড়া। যারা পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর দোসর, পদলেহনকারি ও তোষামোদকারি ছিল। তারা ভেবেছিল যে কখনই এই বাংলাদেশ স্বাধীন হবে না। তাদের ঐ ১২শ’ মাইল দূরের প্রভুরাই এদেশে রাজত্ব করবে। আর তাই তারা নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছে। কি বীভৎস্যভাবে এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, চোখের ডাক্তার তাঁর চোখ তুলে দেয়া হয়েছিল, হার্ট স্পেশালিস্ট তাঁর কলিজা বের করে নেয়া হয়েছিল। কলম দিয়ে যিনি লেখেন তাঁর হাত কেটে নেয়া হয়েছিল। কত অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে এসব হত্যাকান্ড ঘটনো হয়েছিল। সেই বীভৎস দৃশ্য চিন্তা করলে এখনো সারা শরীর শিহরে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানী হানানদার বাহিনী এসেছিল পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের রাস্তাঘাটের তারা কতটুকুই বা চিনত,জানতো। কিন্তুু কে তাদের পথ চিনিয়ে নিয়ে যায়। মক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী ছিলাম। আমাদের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জ্বল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশাসহ অনেক শিক্ষককে পাকবাহিনী হত্যা করেছে। যাদের সাথে ক্লাশ করেছি, যাদের সাথে টিউটোরিয়াল গ্রুপে ছিলাম। সে কথাগুলো এখনো মনে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবসময়ই এই কথাটা মনে করি- আমাদের মধ্যে যদি কিছু বেঈমানের জন্ম হয়ে আলবদর, আল শামস, রাজাকার বাহিনী তৈরী না হত তাহলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পক্ষে কথনই সম্ভব হত না বাংলাদেশের আনাচে কানাচের পথ ঘাট চেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার বা প্রত্যেক শ্রেণী পেশার মানুষ কে কি অবদান রাখছে তা জানা। এদের বাড়ির ঠিকানা জানাও সম্ভব ছিল না। কিন্তুু এই রাজাকাররা তাদের পথ দেখিয়েছিল, তালিকা করেছিল এবং তুলে নিয়ে গিয়েছিল ঐ আলবদর-রাজাকাররা। এই অত্যাচার-নির্যাতন করে হত্যাকান্ড চালানোও এই রাজাকারের দলেরই পরিকল্পনার অংশ ছিল, তারাই করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য-মাত্র সাড়ে ৩ বছর জাতির পিতা ক্ষমতায় ছিলেন। এরপরেই এলো পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। যে ২১ বছর আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস কাউকে জানতে দেয়া হয়নি। একটি প্রজন্মই গড়ে উঠেছে যাদের এই গৌরবের ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, ‘আমি যখন ধানমন্ডির ওই বাড়িতে যাই (বর্তমান বঙ্গন্ধু স্মৃতি জাদুঘর) আমি ওই দোতলার সিঁড়ির কাছে গিয়ে বসি (যেখানে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়) একটা প্রশ্নের উত্তর নিজে তখনও খুঁজে পাই না- যে বাঙালির জন্য আমার পিতা সারাটা জীবন কষ্ট করলেন তারা বুকে কিভাবে গুলি চালালো? তাঁকে গুলি করে ওই সিঁড়ির ওপর ফেলে রেখে দিল! তিনি এটা কখনও বিশ্বাসই করতে চাননি, তিনি তখনও ভাবতেও পারেন নি এই বাঙালিই তাঁর বুকে কোনদিন গুলি চালাতে পারে। এটা কত জন কত সময় কত কথা তাঁকে বলেছেন। অনেক বিশ্ব বরেণ্য রাষ্ট্রনায়করাও তাঁকে বলেছেন কিন্তুু উনি কোনদিন তা বিশ্বাস করেননি। বরং বলেছেন ওরা আমার ছেলের মত। আমাকে কেন মারবে। উনার (বঙ্গবন্ধুর) ভেতরে এই একটা আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তুু যারা এভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা করতে পারে তারাই যখন ঘাতকরূপে আবার দেখা দেয় এবং যারা স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী তাদের ষড়যন্ত্রতো কখনও শেষ হয়নি। কারণ ’৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর যাদের আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল সেই পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী এই পরাজয় ভোলে নি। পরাজয়ের প্রতিশোধ তারা নিয়েছিল ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট। সেটা আরো স্পষ্ট হলো কারণ ১৫ আগস্টেও পর থেকে মনে হলো সমগ্র ইতিহাসটা যেন পাল্টে গেল। তখন থেকে আর পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী বলা হত না বলা হত শুধু হানাদার। কিন্তু কে সে হানাদার, তারা কারা সেই উচ্চারণ করা নিষিদ্ধ ছিল।
প্রধানিমন্ত্রী বলেন, একাত্তরে যাদের আমরা পরাজিত করলাম সেই পরাজিত শক্তির পদলেহনকারিরাই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। আর সেই পরাজিতদেরই তারা ক্ষমতায় বসায়। তিনি বলেন, কত দুর্ভাগ্য আমাদের পরাজিত এবং স্বাধীনতা বিরোধীদেরকেই প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপদেষ্টা বানিয়ে দেয়া হলো। যারা চিন্থিত যুদ্ধাপরাধী জাতির পিতা যাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার শুরু করেছিলেন পঁচাত্তরের পর বিচার বন্ধ করে তাদের মুক্তি দিয়ে দেয়া হয়। তাদের হাতে আমাদের শহীদদের রক্ত স্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদেও ভোটের অধিকার ছিল না। মার্শাল ’ল’ অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ সংশোধন করে তাদেও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হয়। ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে রাজনীতি ও দল করার করে দেয়া হলো। বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগ যারা স্বাধীনতা এনেছিল সব দোষ চাপানো হলো তাদের ওপর আর যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে টু শব্দটি ও করার সুযোগ বন্ধ করা হলো। মুখ ফুটে কেউ কোন কথা বলবে কেমন কওে কারণ তখন মার্শাল ‘ল’ আর প্রতিরাতে কারফিউ চলছে। বলতে গেলে তারপর প্রায় ১০ বছর এদেশে প্রতিরাতে কারফিউ চলেছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরবর্তীতে ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতি যখন তাঁর গৌরবের ইতিহাস ভূলে যায় তখন তারা সামনে এগুবে কিভাবে।
সে সময়কার বুদ্ধিজীবী সমাজের একটি অংশের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বুদ্ধিজীবী সমাজ বা আমাদের দেশের কিছু মানুষ-আমি দেখেছি, তারাই যেন এই ধরনের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারি। যারা কারফিউ দিয়ে দেশ চালাচ্ছে তাদেরই গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে উঠে পড়ে লাগলো। তারাই সে সময়কার ক্ষমতাসীনদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলো। শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশকে আরো ধ্বংসের দিকে নিতে চেষ্টা চালালো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন দিন ছিল আমরা জয়বাংলা শ্লোগান দিতে পারতাম না। আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হত। বঙ্গবন্ধু ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। ৭ মার্চের ভাষণ বাজালে সেখানে হামলা হত। মুক্তযুদ্ধের গান, গৌরবগাঁথা তখন মানুষ ভুলেই যেতে বসেছিল। ’৮১ সালে দেশে ফিরে আসার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আসার পরে ঐ ৩২ নম্বরের বাড়িতেও আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মৃত বাবা-মা-ভাইদের জন্য দোয়া পড়তে যাব তাও যেতে দেয়া হয়নি।
সে সময় পুরো বাংলাদেশটাকেই যেন এক উল্টোপথে চালোনা করা হচ্ছিল প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৩ বছরের সংগ্রামের ইতিহাস আর ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ এই ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামকে অস্বীকার করে যেন কেউ ঘোষণা করলো আর দেশ স্বাধীন হয়ে গেল ।
প্রধানমন্ত্রী জিয়াউর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি সত্যিকারের স্বাধীনতা এনেই থাকেন তাহলে রাজাকার-আলবদরদের কি করে ক্ষমতায় বসালেন? কারো ঘোষণাতেই যদি স্বাধীনতা এসে থাকবে তাহলে যারা পাকিস্তানের পক্ষে জাতিসংঘে গিয়ে বাংলাদেশ হবার বিরোধীতা করেন এমন ব্যক্তিকে কি করে তার মন্ত্রীসভার প্রধানমন্ত্রী বানান। আসলে সম্পূর্ণ একটা মিথ্যার আবরণ দিয়ে আমাদের দেশের মানুষকে ঢেকে ফেলার একটা প্রবণতা তাদের মধ্যে ছিল। এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন বলে তাঁদের কথা কৃতজ্ঞ চিত্রে স্মরণ করেন সংগঠনের সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক নির্যাতন অত্যাচার,জেল-জুলুম তাদের সইতে হয়েছে তাও তাঁরা আদর্শচ্যূত হন নি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে সবসময় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য তাঁরা প্রস্তুত থেকেছেন। অনেকে জীবন দিয়ে গেছেন এবং তাঁদের এই ত্যাগ বিফলে যায়নি। আজকে যাদের অনেকেই বেঁচে নেই তাদের কথা আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওপর সংঘঠিত বিভিন্ন হামলা প্রতিরোধে দলের নেতা-কর্মীদের এগিয়ে আসার কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘তারা কেউ ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়নি। বরং আমাকে ঘিরে ধরে নিজের জীবন দিয়ে আমাকে রক্ষা করে গেছেন।’ এত প্রতিকূলতার মাঝেও দেশের অনেক সাহসী ব্যক্তি প্রতিবাদি হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা কথা বলেছেন। স্বাধীনতার কথা বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছেন। যখন যে সমারিক জান্তা ক্ষমতায় এসেছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এজন্য অনেককেই অনেক অপমান হতে হয়েছে। ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তারপরেও কিন্তুু বলেছেন। সবাই বিকিয়ে যায়নি। সবাই বিকিয়ে যায় না। সবাই বিকিয়ে যেতে পারে না। তাই যদি হত তাহলে আজকে বাংলাদেশ এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারত না। কাজেই আজকে আমরা যেখানে এসেছি আমি মনে করি আমাদের সকলের প্রচেষ্টাতেই আমরা এটা পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের একটাই চেষ্টা থাকবে স্বাধীনতার যে চেতনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সেই চেতনাকে ধারণ করেই আমরা যেন আগামীতে এগিয়ে যেতে পারি। পিতা-মাতা-ভ্রাতা সব হারানোর পরও এদেশের মানুষের ভালোবাসাই তাঁর প্রেরণা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, একবার তিনি রিলিফ সহায়তা দিতে চর ক্লার্কে গিয়েছিলেন। সে সময় বন্যার পানি, রাস্তায় পানি তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন। একজন বুড়ি মা (এক দরিদ্র মহিলা) তাঁকে টেনে নিয়ে ঘরে নিয়ে খেজুরের পাটিতে বসতে দেন। গা-হাত তাঁর মমতার স্পর্শমাখা হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন। উঠোনের ডাব গাছ থেকে একটা ডাব পেরে কেটে তাঁকে খেতে দিয়ে বলছেন ‘বাপ জীবনটা দিয়ে গেল আমাদের জন্য। তুমিও রাস্তায় নামছো মা- আমাদের জন্য, তোমার বাপটাতো জীবনটাই দিয়ে গেল।’
শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ মানুষের এই যে ভালবাসা আমি পেয়েছি গ্রাম-গঞ্জের মানুষের। পর্ণ কুটিরের ঐ বৃদ্ধের-আমার এখন একটাই লক্ষ্য এদেশের কোন মানুষই আর পর্ণ কুটিরে থাকবে না। গৃহহারা থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষ অন্তত মানুষের মত বাঁচতে শিখবে, বাঁচবে। কেউ ক্ষুধার্ত থাকবেনা- সেইটুকু যদি করে যেতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা জীবন দিয়ে গেছেন তাঁদের মহান আত্মত্যাগ স্মরণে রেখেই আমাদের এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। তাদের ত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে আমাদেরকে উন্নত-সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠতেই হবে, এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।
শেখ হাসিনা বলেন, মৃত্যু যেকোন সময় যেকোন ভাবে আসতে পারে। তবে, সবরকম প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকবেলার সাহস আমি রাখি। আর এই শক্তির উৎস বাংলার জনগণ এবং আওয়ামী লীগের অগণিত সব নেতা-কর্মী। আমাদের সকল সহযোগী সংগঠন এবং মুজিব আদর্শের সৈনিক-তারাই আমার মূল শক্তি, তাদেরকে সাথে নিয়েই সংগ্রাম করে আমরা এ পর্যন্ত এসেছি।
Comments
comments