লাইফস্টাইল ডেস্ক: প্রতিটি মানুষ বিশেষ করে পুরুষ চায় আমৃত্যু তার নারী সঙ্গীর কাছে নিজেকে প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করতে। কোনো মহিলাও চান না তার পুরুষ সঙ্গী তাকে কখনও নিষ্কর্মা ভাবুক। শারীরিক কিছু অবস্থা কাছে নারী কিংবা পুরুষের চাওয়া-না চাওয়া গুরুত্বহীন হয়ে ওঠে। শারীরিক এ অবস্থাগুলো সৃষ্টি হলেও চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে সে সব দূর করা সম্ভব।
প্রতিটি মানুষের যৌনজীবনের সঙ্গে স্বাস্থ্যগত অবস্থা জড়িত। যে স্বাস্থ্য সমস্যায় মানুষের যৌনজীবন ব্যাহত হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হল:
ডায়াবেটিস
একজন মানুষের সে নারী বা পুরুষ যেই হোক না কেন, তার যৌনজীবনকে স্তব্ধ করে দিতে ডায়াবেটিস রোগটিই যথেষ্ট। ডায়াবেটিসের কারণে পুরুষের পৌরুষত্বহানি এবং মেয়েদের অনীহা পরিলক্ষিত হয়। নিয়মিত ডায়েটিং, ব্যায়াম এবং ইনসুলিন চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনলে যৌনক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। ডায়াবেটিসের কারণে যে সব পুরুষের স্থায়ী পৌরুষত্বহানি ঘটেছে একমাত্র পিনাইল ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
আর্টারিও স্ক্লেরোসিস
আর্টারি বা ধমনী শক্ত হয়ে গেলে পুরুষের লিঙ্গোত্থানের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত সেখানে সরবরাহ হতে পারে না। আর্টারিও স্ক্লেরোসিস সাধারণত ধূমপায়ীদের এবং যারা চর্বিযুক্ত খাবার খান তাদের হয়ে থাকে। এ সমস্যা প্রতিরোধে তাই ধূমপান বর্জন, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
প্রোস্টেটাইটিস
এটি পুরুষদের রোগ। প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহের ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, সরু ধারায় প্রস্রাব হওয়া, মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি না হওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। যুবক এবং প্রৌঢ় উভয়ই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। প্রোস্টেটাইটিসের ফলে পুরুষের যৌনক্ষমতা অনেক কমে যায়। এ ক্ষেত্রে তাকে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। যতদিন রোগটি ভালো না হয় ততদিন কোনো নারীর সঙ্গে মিলিত হওয়া যাবে না।
সিসটাইটিস
এটি হচ্ছে মূত্রথলির প্রদাহ। এ ক্ষেত্রে রোগীর মূত্রপথে চুলকানি, জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া কিংবা বারবার প্রস্রাব করার অভিজ্ঞতা ঘটে। পুরুষদের চেয়ে মহিলারা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। সিসটাইটিসের ফলে নারী কিংবা পুরুষ উভয়ের যৌন ইচ্ছা কমে যায়। প্রচুর পরিমাণ পানি এবং সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে এর কার্যকর চিকিৎসা।
মানসিক চাপ
মানসিক চাপ পুরুষ ও মহিলার যৌনজীবনের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। মানসিক চাপের ফলে একজন পুরুষের পুরুষত্বহানি ঘটতে পারে, মহিলাদের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে রাগমোচনের অভাব কিংবা কামশীতলতা। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা নারী প্রায় প্রতিমাসেই এ ধরনের মানসিক চাপের শিকার হন। এ ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার জন্য কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
মাদক সেবন
মাদকদ্রব্যের প্রতি নির্ভরতা পুরুষ কিংবা নারী উভয়েরই যৌনশক্তি কমিয়ে দেয়। অ্যালকোহল, ধূমপান, কফজাতীয় সিরাপ প্রভৃতি নিয়মিত সেবনে যৌনশক্তি কমে যায়। যারা ফেনসিডিল সিরাপ নিয়মিত সেবন করেন সে সব পুরুষের পুরুষত্বহানি ঘটে। এ ছাড়া উচ্চরক্তচাপের ওষুধ (বিটা-ব্লকার) দীর্ঘদিন সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াস্বরূপ যৌনশক্তি কমে যায়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদকদ্রব্য সেবন একেবারে বন্ধ করতে হবে।
হরমোনের পরিবর্তন
মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে যৌন ইচ্ছা কমে যায়। প্রথম প্রথম যৌন ইচ্ছা প্রবল হলেও পরে যোনিপথের পিচ্ছিলতা ও মসৃণতা কমে যাওয়ার কারণে যৌনসঙ্গমে অনীহা চলে আসে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন প্রতিস্থাপন থেরাপি কার্যকর। নিয়মিত ভিটামিন ‘ই’ খেতে হবে।
পিআইডি
এটি মহিলাদের তলপেটের রোগ। সাধারণত যুবতী এবং যৌনভাবে সক্রিয় যে কোনো বয়সের মহিলাদের এটা ঘটতে পারে। এর ফলে যৌনজীবন দুঃসহ বলে মনে হয়। জরায়ু, জরায়ুনালী, ডিম্বাশয়, ডিম্বনালী প্রভৃতি অঙ্গে সংক্রমণ ঘটে। সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক সহকারে এর চিকিৎসা করা হয়।
হাইড্রোসিল
এটি পুরুষের রোগ। পুরুষের অণ্ডকোষের চারদিকের ঝিল্লিগুলো তরল পদার্থে পূর্ণ হয়ে ওঠে। যে কোনো বয়সে হাইড্রোসিল হতে পারে। হাইড্রোসিলের ফলে যৌনকার্য ব্যাহত হয়। অপারেশনের মাধ্যমে হাইড্রোসিলের চিকিৎসা করা হয়। কখনও কখনও সিরিঞ্জ দিয়ে তরল পদার্থ টেনে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সহকারে চিকিৎসা করা হয়, এ ক্ষেত্রে পুনরায় হাইড্রোসিলে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থেকে যায়।
ফাইব্রয়েড
ফাইব্রয়েড হচ্ছে জরায়ুর টিউমার। এ ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রচুর রক্তস্রাব ও তলপেটে ব্যথা হয়। এর ফলে তারা যৌনক্রিয়ার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। জরিপে দেখা গেছে, ৩০ বছরের ওপরের ২০ শতাংশ মহিলার ফাইব্রয়েড রয়েছে। অপারেশন করে ফাইব্রয়েড মুক্ত করলে যৌনসংক্রান্ত সমস্যা মিটে যায়।
Comments
comments