Download Free BIGtheme.net
Home / জেলার খবর / এমপি লিটন হত্যার এক মাস আজ, উন্মোচিত হয়নি হত্যার রহস্য

এমপি লিটন হত্যার এক মাস আজ, উন্মোচিত হয়নি হত্যার রহস্য

অনলাইন ডেস্কঃ গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়ার এক মাস পূর্ণ হলো আজ। একমাস অতিক্রান্ত হলেও হত্যার রহস্য এখনও উন্মোচিত হয়নি। ধরা পড়েনি প্রকৃত খুনীরাও। ফলে চরম হতাশ এবং বিক্ষুব্ধ হয়েছেন সুন্দরগঞ্জের সর্বস্তরের ও প্রয়াত লিটনের পরিবার-পরিজন।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যার রহস্যের জট খুলতে পারেনি পুলিশ। বহু লোককে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও এখনো ধরাছোয়ার বাইরে খুনিরা।

এছাড়া রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সচেতন মানুষও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠেছে। তাদের আশঙ্কা যদি এই হত্যাকা-ের প্রকৃত খুনীরা ধরা না পড়ে তাহলে জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর সন্ত্রাসীরা সুন্দরগঞ্জের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এমপি লিটন খুন হওয়ার পর থেকে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তীক্ষ মেধা সম্পন্ন বিশেষায়িত দল হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনসহ খুনিদের গ্রেফতারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। এই তৎপরতার জের ধরেই হত্যাকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত জামায়াত-শিবির, বিএনপির নেতাকর্মীসহ অন্যদের মধ্য থেকে ১২৮ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদের মধ্যে থেকে ২৩ জনকে হত্যা মামলার সঙ্গে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পরে সবাইকে জেলহাজতে পাঠায়।

এরমধ্যে ১২ জনকে রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা এমপি লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি, বড় শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার, মামলার বাদী ফাহমিদা বুলবুল কাকলি, বড় বোন আফরোজা বারীসহ নিকট-আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, দলীয় সহচরদের একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ ছাড়া এমপির ব্যক্তিগত গাড়িচালক খন্দকার ফোরকান আলী ও কাজের ছেলে ইউসুফ আলীকে গত ১৭ দিন ধরে থানায় আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখে পুলিশ।

ঘটনার দিন এমপি লিটনের বাড়ির বাহির উঠানে ক্রিকেট খেলারত ৭ম শ্রেণির ছাত্র জুয়েলকেও থানায় ডেকে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কেননা এই জুয়েলের সঙ্গেই খুনিদের বাকবিতন্ডা হয়েছিল। লিটনকে খুন করার আগে মাঠে এসে খুনিরা জুয়েলসহ অন্যান্য ছেলেদের মাঠ থেকে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করে চলে যেতে বললে জুয়েল তাদের এই কথার প্রতিবাদ জানিয়েছে।

এদিকে এমপি লিটন খুনের ঘটনার সময় তার বাড়িতে অবস্থানরত বড় শ্যালক বেদারুল আহসান বেতারকেও ইতোপূর্বে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এখনও মাঝে মাঝে তদন্তকারি কর্মকর্তারা তাকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। কেননা এই বেতারুল আহসান বেতার খুনিদের লিটনের সঙ্গে ঘরে প্রবেশ করার সময় থেকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাশের ঘরেই অবস্থান করছিল। এ ছাড়া সে আহত লিটনকে গাড়িতে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পরিবারের সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলন:

এমপি লিটনের বড় বোন আফরোজা বারী গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে ২৫ জানুয়ারি পরিবারবর্গ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই খুনকে ঘিরে রহস্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, খুনিরা লিটন হত্যাকা-ের জন্য নিরাপদ জায়গা হিসেবে তার নিজ বাড়িকেই বেছে নেয়।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, তার বাড়িটিই খুনিদের কাছে নিরাপদ বিবেচিত হলো কেন? কিভাবে খুনিরা পরিচয় না দিয়েই ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ার সুযোগ পেল? তা ছাড়া লিটনের অতন্দ্র প্রহরী জার্মান শেফার্ড কুকুর দুটো ওই সময়ে কোথায় ছিল? কেন গিয়েছিল? দুর্বৃত্তরা রিভলবারের ৫টি গুলি করার পরও কেন তার নিকটজনরা লিটনের কাছে এল না? লিটন গুলিবিদ্ধ হবার পর কাউকে কাছে না পেয়ে তাকে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে আঙ্গিনার দিকে ছুটে যেতে হলো কেন? তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন, কেন লিটনের ঘনিষ্ঠজন, দলীয় নিবেদিত নেতাকর্মী এবং পরীক্ষিত সহযোদ্ধারা কেউই তার পাশে ছিল না, তাদের কি দুরে সরে দেওয়া হয়েছিল?

এমপি লিটন হত্যা মামলা:

সুন্দরগঞ্জ থানায় লিটন হত্যা মামলাটি দায়ের করেছিল লিটনের ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী। ওই মামলায় ৫ জন অজ্ঞাত পরিচয় খুনিকে আসামি করা হয়।

এদিকে লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি এমপি লিটন নিহত হওয়ার ৪ দিন পর ৩ জানুয়ারি বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, জামায়াত নেতা গোলাম আজমের জামায়াত-শিবিরের খুনিরাই তার স্বামীকে হত্যা করেছে। তিনি মর্মান্তিক এই হত্যার বিচার চান এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিগত ১৯৯৮ সালের ২৬ জুন সুন্দরগঞ্জ ডি ডাব্লিউ ডিগ্রি কলেজ মাঠে জামায়াত-শিবির আয়োজিত জনসভায় গোলাম আজমের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। সেসময় স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের এই সভা পন্ড করে দিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ লিটন তার বন্দুক হাতে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ওই জনসভায় প্রবেশ করে গোলাম আজমকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন।

এতে জনসভাটি পন্ড হয়ে যায়। ফলে সেই থেকে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার বাহিনী লিটনকে যে কোনো মূল্যে হত্যার টার্গেট করে রেখেছিল। সেসময় তার গুলিতে আহত জামায়াতের ফতেখাঁ গ্রামের ক্যাডার হেফজসহ আরও দুর্ধর্ষ জামায়াত ক্যাডাররা লিটনকে মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠিয়ে এবং মোবাইল করে দীর্ঘদিন থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।

লিটনের শ্যালক বেতার, তদন্তকারি কর্মকর্তা ও থানার ইনচার্জ যা বলেন:

এদিকে বেদারুল আহসান বেতার তার বাড়িতে একান্ত সাক্ষাতকারে বলেন, এমপি লিটন হত্যার পর থেকে আমার বাড়িতে নজরদারি এবং জিজ্ঞাসাবাদ দিনদিন বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, এমপি লিটন খুন হওয়ার আগের মুহূর্তে তার বাড়িতে (এমপি লিটন) যাদের আমি এক ঝলক দেখেছি আটককৃতদের মধ্যে তারা থাকলে সামনা-সামনি করলে অবশ্যই চিনতে পারব।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হায়দার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান জানান, আমরা সর্বোচ্চ মেধা খাটিয়ে বিভিন্ন কৌশল বিবেচনায় নিয়ে খুনের জট খোলাসহ খুনিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। সুন্দরগঞ্জ থানার ইনচার্জ মুহাম্মদ আতিয়ার রহমান জানান, আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। তবে হত্যাকান্ড টি পরিকল্পিত হওয়ায় খুনের জট খোলার বিষয়টি সময়ের ব্যাপার সাপেক্ষ।

Comments

comments