অনলাইন ডেস্ক: দুই বছরের কারাদণ্ড ও একলাখ টাকার দণ্ডের বিধানসহ ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ শর্তসাপেক্ষ অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের বিয়ের বিধান রেখে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ পাস করেছে জাতীয় সংসদ। তবে এজন্য আদালতের নির্দেশ এবং মাতা-পিতা বা অভিবাবকের সম্মতিক্রমে বিধি মোতাবেক বিয়ে অনুষ্ঠানের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। বিলে বাল্যবিবাহ অর্থ করা হয়েছে, এইরূপ বিবাহ যার কোন পক্ষ বা উভয় পক্ষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক।
এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক অর্থ করা হয়েছে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক অর্থ বিবাহের ক্ষেত্রে ২১ বৎসর পূর্ণ করেননি এমন কোন পুরুষ এবং ১৮ বৎসর পূরণ করেননি এমন কোন নারী। এছাড়া নতুন প্রণীত এ আইনে, কোন প্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এজন্য দুই বছরের কারাদণ্ড বা একলাখ টাকা অর্থদণ্ড আরোপের বিধান রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে এক মাসের আটকাদেশ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তিযোগ্য হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ সংসদীয় কমিটির সংশোধিত আকারে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এরআগে বিলের উপর আনীত কমিটি গঠন, জনমত যাচাই ও সংশোধনী প্রস্তাবসমূহ কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বিলের ১৯ ধারায় বিশেষ বিধান এনে বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং মাতা-পিতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ে সম্পাদিত হলে তা এই আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল হলেও এই আইনের অধীনে চলমান মামলার ক্ষেত্রে তা প্রয়োজ্য হবে না মর্মে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। বিলে এই আইনের অধীনে কোন অপরাধ সংঘটনের দুই বছরের মধ্যে অভিযোগ দাখিল করার বিধান রাখা হয়েছে। বাল্যবিবাহ সম্পাদন বা পরিচালনা বা বাল্য বিয়েতে বাধ্য করা হলে পিতা-মাতা বা অভিভাবক বা সংশ্লিষ্ট অন্যকোন ব্যক্তি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন এবং সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সবোর্চ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া বাল্যবিবাহ নিবন্ধনের জন্য নিকাহ রেজিস্টারের লাইসেন্স বাতিলসহ অনরূপ শাস্তি আরোপের বিধান বিলে রাখা হয়েছে। তবে আদালত বাল্যবিবাহ বন্ধে উদ্যোগী হওয়ার শর্তে ইচ্ছা করলে মুচলেকা নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপরাধের দায় থেকে খালাস দিতে পারবেন। বিলে বাল্যবিবাহ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও শাস্তি বিধানের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাল্যবিয়ে বন্ধে সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি করার বিধান রাখা হয়েছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহ নিরোধের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, শিশু অধিকার সনদ সাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং শিশু আইন ২০১৩ তে বর্ণিত শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯ রহিত করে যুগোপযোগী বিলটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
Comments
comments