জেলা প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় ‘মোরার’ আঘাতে কক্সবাজারে শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বহু গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে।বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ।অধিকাংশ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ মে) ভোর ৬টায় মোরা কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন উপকূলে আঘাত হানে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর মোরা কক্সবাজার অতিক্রম করে বলে জানায় স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, মোরা ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে টেকনাফে ও ১১৪ কিলোমিটার বেগে সেন্টমার্টিনে আঘাত করে। এছাড়া কক্সবাজারে ১১৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে।
তিনি আরও জানান, আঘাত হানার পর সকাল ৮টার দিকে কক্সবাজার অতিক্রম করে মোরা।
মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
মোরার কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর আহম্মদ বলেন, “ সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে দেড় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় গাছপালা উপড়ে গেছে।
“আশপাশে যতদূর দেখেছি তাতে কমপক্ষে ৭০ ভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে। অগণিত সংখ্যক গাছপালা ভেঙে গেছে। আমার নিজের সেমিপাকা বাড়িটিরও আংশিক ভেঙে গেছে।” এখানে এখন প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।তবে ঝড়ের আগেই সবাই আশ্রয়কেন্দ্রসহ উঁচু ভবনগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন এলাকায়ও বেশ কিছু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, উপড়ে গেছে কিছু গাছপালা। এছাড়া কিছু লোক আহত হয়েছে বলে শুনেছেন সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন। তবে তিনি আহতদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ভোর ৬টার দিকে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে মোরা। তার আগে থেকেই হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এখানে বেশ কিছু গাছপালা উপড়ে গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জয় জানান, এ জেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
“মোরা কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে আঘাত হেনেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি ও গাছপালার। তবে কোনো ধরনের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।”
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, উপকূলীয় এলাকার দুই লক্ষাধিক মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে জেলার ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। গঠন করা হয়েছে ৮৮টি মেডিকেল টিম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির আওতায় ৪১৪টি ইউনিটের ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্টের ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।
আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের নিরাপত্তার পাশাপাশি নেয়া হয়েছে খাদ্য সরবরাহেরও ব্যবস্থা। যত লোক আশ্রয় কেন্দ্রে আসবে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
Comments
comments