শাহিনুর ইসলাম, লালমনিরহাট : লালমনিরহাট আদিতমারীতে সবজি চাষে কৃষকের বিরাট সাফল্য। সবজি চাষ করে অনেক কৃষক এখন সবচ্ছল জীবন যাপন করছেন। এক সময় অভাব অনটন ছিল নিত্য সঙ্গী, এক বেলা খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করতে হয়েছে। এখন সেই দিন আর নেই তাদের।
অল্প দিনেই সবজি চাষ করে পাল্টে দিয়েছেন আব্দুল হামিদ তার জীবন যাত্রার মান। অভাব নামের শব্দটি চিরতরে বিদায় দিয়েছেন।
শুধু আব্দুল হামিদই নয়, হয়রত আলী, হেলাল উদ্দিনসহ অনেকেই সবজি চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। এদের সবার বাড়ি উপজেলার সুইসগেট সংলগ্ন আদিতমারী গ্রামে। তবে এদের সবারই অভিযোগ উপজেলা কৃষি বিভাগের বিরুদ্ধে।
আদিতমারী উপজেলা সবজি খ্যাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নে প্রতি বছর কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ জাতের সবজির চাষাবাদ করা হয়। ভাদাই ্ইউনিয়নের কিসামত চন্দ্রপুর, বড়াবাড়ি, আদিতমারী, কমলাবাড়ি ইউনিয়নের চরিতাবাড়ি, চন্ডিমারী,কুমড়িরহাট, সারপুকুর ইউনিয়নের মসুর দৈলজোড়, সবদল, পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশহর, নামুড়ি,সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের গিলাবাড়ি, দুর্গাপুর ইউনিয়নের শঠিবাড়ি এলাকা সবজি এলাকা হিসেবে পরিচিত।
এখানকার লোকজনকে এক সময় খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করতে হত। বিশেষ করে কমলাবাড়ি ও ভাদাই ইউনিয়নের লোকজন প্রথমত পরীক্ষামূলকভাবে সবজির চাষাবাদ করে সফলতা পাওয়ায় উপজেলায় সবজির চাষাবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে উপজেলার উৎপাদিত সবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির জন্য ট্রাক যোগে যাচ্ছে। প্রতিদিন কমলাবাড়ি কাউন্সিল বাজার ও আদিতমারী থেকে ২/৩টি ট্রাক যোগে বিপুল পরিমাণ সবজি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। ফলে আস্তে আস্তে এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠে সবজি চাষ। আর পাল্টে যেতে বসেছে সেখানকার জীবন যাত্রার মান।
আদিতমারী সুইসগেট এলাকার সফল সবজি চাষী আব্দুল হামিদ। তিনি জানান, একসময় খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করতে হয়েছে। তিনি ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে সবজি চাষাবাদ করে আসছেন। সবজির চাষাবাদ করে ৪ মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বহন করছেন। বড় মেয়ে এবছর এইচএসসি পাশ করেছে। দ্বিতীয় মেয়ে এইচএসসিতে পড়ছে, ৩য় মেয়ে এবছর পিএসসি পরীক্ষার্থী আর সবার ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেনীতে পড়ছে। তিনি এবছর ৩৫ শতক জমিতে সিম ও ২৭ জমিতে লাউ চাষাবাদ করেছেন। লাউ চাষে খরচ হয়েছে মাত্র ৪ হাজার টাকা আর এখন পর্যন্ত লাউ বিক্রি করে পেয়েছেন ২০ হাজার টাকা। লাউ থেকে আরও ১০ হাজার টাকা পাওয়ার আশা করছেন। সিম চাষে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
বর্তমানে সিমের বাগানে ফুল এসেছে। তবে সার্বক্ষনিকভাবে সিম গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। সিম গাছের ফুল মাঝে মধ্যে ঝড়ে পড়লেও দেখা মিলছে না মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের। শুধু আব্দুল হামিদ নয়, হয়রত আলী এছর ১৮ শতক জমিতে সিম, ২২ শতক জমিতে লাউ ও ২৫ শতক জমিতে বেগুণের চাষাবাদ করেছেন। এখানকার অধিকাংশ পরিবার সবজি চাষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। তাদের সবার অভিযোগ উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে না পাওয়ার। সঠিক পরামর্শ পেলে সবজি চাষে নীরব বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে তারা দাবী করেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলায় এক হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সবজির চাষাবাদ হয়েছে। তবে এ হিসেব আরও বাড়তে পারে বলে সুত্রটি দাবী করেন।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি অফিসার বিপ্লব কুমার মোহন্ত মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়া কিভাবে সবজি চাষে বিপ্লব ঘটানো সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগ কাজ করবে বলে তিনি দাবী করেন।
Comments
comments