জেলা প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জলমহাল দখলকে কেন্দ্র করে ইজারাদার ও স্থানীয় একরার বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের ঘোরামারা সাতপাকিয়া প্রকাশ জারুলিয়া নদীর জলমহালে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার হাতিয়া গ্রামের ছানা উল্যার ছেলে তাজুল ইসলাম (৩৫), আকিল নগর গ্রামের ইসহাক মিয়ার ছেলে শাহরুল (২৮) এবং একই গ্রামের আতিউল্লার ছেলে উজ্জ্বল হোসেন (২৫)।
এদের মধ্যে তাজুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই মারা যান। শাহরুল ও উজ্জ্বলকে আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে শাহরুল এবং ৫টার দিকে উজ্জ্বল মারা যান।
নিহতরা স্থানীয় যুবলীগ নেতা একরার বাহিনীর লোক বলে জানা গেছে।
আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হাতিয়া গ্রামের মিরাস মিয়ার ছেলে আল আমিন (২৪), সুনাফর (২৭) এবং উত্তর সুরিয়ারপার গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে মালেক মিয়াকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত অন্যদের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় যুবলীগ নেতা একরার বাহিনীর লোকজন তার নেতৃত্বে জারুলিয়া জলমহাল দখল করতে গেলে ইজারাদার দক্ষিণ নাগেরগাও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ধনঞ্জয় দাসের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসময় এলোপাতাড়ি গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলেই তাজুল ইসলাম নিহত হন। শাহরুল ও উজ্জ্বলসহ আহত হন অর্ধশতাধিক। পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহরুল ও উজ্জ্বল মারা যান।
নিহত তাজুলের লাশ দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্যে সুনামগঞ্জে পাঠায়।
ইজারাদার ধনঞ্জয় দাসের পক্ষের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মাসুক মিয়া জানান, সরকারকে যথাযথ খাজনা প্রদান করে দখল প্রাপ্ত হয়ে আমরা জলমহাল ভোগ-দখল করে আসছি। ১১টার দিকে একরার ও তার বাহিনীর ৩০/৩২ লোক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আমাদের খলাঘরে মৎস্যজীবীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। ভয়ে খলাঘর থেকে দিগ্বিদিক পালাতে গিয়ে আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছেন।’
তিনি দাবি করে বলেন, কিছুদিন আগেও একরার ও তার বাহিনীর লোকজন অবৈধ বন্দুক, পাইপগান নিয়ে অতর্কিতভাবে আমাদের জলমহালে প্রবেশ করে মাছ লুট করে এবং খলাঘর দখল নিতে গুলি চালিয়েছিল।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবরে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ধনঞ্জয় দাস লিখিত অভিযোগ করেছিলেন বলেও জানান মাসুক মিয়া।
একরার হোসেন দাবি করেন, ইজারাদারদের কাছ থেকে তিনি ছয় বছরের জন্য সাব-লিজ নিয়ে জলমহাল দখলে আছেন। ঘটনার দিন প্রতিপক্ষের লোকজন তার লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
দিরাই থানার ওসি আবদুল জলিল জানান, মঙ্গলবার ১১টার দিকে একারার ৩০/৩২ জন লোক নিয়ে জলমহালে দখল করতে গেলে ইজারাদার ধনঞ্জয়ের লোকজনের সঙ্গে একরারের লোকজনের সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
তিনি জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
Comments
comments