Download Free BIGtheme.net
Home / জাতীয় / পিলখানা হত্যাকাণ্ডের অষ্টম বার্ষিকী আজ

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের অষ্টম বার্ষিকী আজ

অনলাইন ডেস্কঃ রক্তাক্ত বিডিআর বিদ্রোহের (পিলখানা হত্যাকাণ্ড) অষ্টম বার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের (২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি) এই ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ওই বাহিনীর ৭৪ সদস্য নিহত হন। বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতর পিলখানার এই বিদ্রোহ সারা দেশের ৫৭টি ইউনিটে ছড়িয়ে পড়েছিল। টানা একদিন এক রাত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবেলার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আসে।

আলামত মুছে ফেলতে লাশ পুড়িয়ে দেয়া, গণকবর, ম্যানহোলে ফেলে দেয়াসহ নানা পদক্ষেপ নেয় বিদ্রোহীরা। এ ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়। এসবের মধ্যে বিদ্রোহ ও হত্যা মামলার রায় হলেও বিস্ফোরক মামলার রায় এখনও হয়নি। মামলাটি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলার ৮৩৪ আসামির মধ্যে ২০ জন এখনও পলাতক।

এদিকে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় পিলখানা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ আসামির মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি ২ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির জন্য এক মাস সময়ের আবেদন করলে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার। পিলখানা হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য এই বেঞ্চ গঠন করা হয়।

জানা গেছে, ৩৫৯ কার্যদিবস ধরে এ মামলার কার্যক্রম চলছে। ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল নিয়ে ৩৫ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক পাঠ করা হয়েছে ১২৪ কার্যদিবসে। বাকি ২৩২ কার্যদিবস রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করেছে। বৃহস্পতিবার ৩৫৯তম দিনে এসে চূড়ান্ত শুনানির তারিখ পেছানো হলো দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় এ মামলার।

পিলখানার ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হলেও বিস্ফোরক দ্রব্য মামলা নিম্ন আদালতে এখনোও চলমান। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার অস্থায়ী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আকতারুজ্জামান এ হত্যা মামলার রায় দেন। এতে ১৫২ জনকে ফাঁসিসহ অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেয়া হয়। ২৭১ জন খালাস পান।

এই মামলাটি পরে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। এছাড়া আসামিরা আপিল ও জেল আপিলও করেন। হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি একসঙ্গে হচ্ছে। অপরদিকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চলছে। যার আসামি ৮৩৪ জন।

এদের মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। বাকি ২০ জন এখনো পলাতক রয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। বিষ্ফোরক মামলাটিও ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা থাকলেও আসামিপক্ষের সময় আবেদনের পরিপেক্ষিতে তা হয়নি।

বিদ্রোহীদের বিচার, সংশ্লিষ্টদের সাহায্য-সহযোগিতার পরও স্বজনহারাদের কান্না থামেনি আজও। তবে কলঙ্কিত সেই ইতিহাস ও ক্ষত ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর নিরন্তর প্রচেষ্টা সবার মাঝেই আজ বিদ্যমান। বিদ্রোহীদের হাতে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদও নিহত হন। বিদ্রোহীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি মহাপরিচালকের স্ত্রী, গৃহকর্মী ও বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজনেরাও। ওইদিন ঢাকাবাসীর ঘুম ভাঙে গুলি আর বোমার বিকট শব্দে। প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা ঢাকা শহর। দিনটি ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেয়েছে কলঙ্কিত ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ হিসেবে।

বিজিবির কর্মসূচি: বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহসিন রেজা জানান, পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ ব্যক্তিবর্গের স্মরণে শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হবে। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানাসহ বিজিবির সকল রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন এবং বিজিবির সকল মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে)।

এছাড়া আগামীকাল রবিবার বাদ আসর বিকেল পৌনে ৫টায় পিলখানাস্থ বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদ ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

Comments

comments