লাইফস্টাইল ডেস্ক: একেক জন মানুষের মানসিক দৃঢ়তা একেক রকমের। নিজেকে সংযত রাখার ক্ষমতা, কিংবা নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন রকমের হয়। কিন্তু এমন কিছু কিছু চিন্তা রয়েছে, যা প্রত্যেকটি মানুষের মনের মধ্যে সর্বক্ষণ ক্রিয়া করে চলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন অন্তত তিনটি বিষয়ের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলি সম্পর্কে প্রতিটি মানুষ সর্বক্ষণ ভেবে চলেছেন।
মনোবিজ্ঞানী সুজান উইনশচেঙ্ক তার বই ‘নিউরো ওয়েব ডিজাইন: হোয়াট মেকস দেম ক্লিক’ বইতে বিষয়টি সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করছেন। তিনি মানবমস্তিষ্ককে তিন ভাগে ভাগ করছেন— আদি মস্তিষ্ক, মধ্য মস্তিষ্ক এবং আধুনিক মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের এই তিনটি অংশের কাজ আলাদা আলাদা রকমের। আধুনিক মস্তিষ্ক হল সেই অংশটি যা সচেতন, যুক্তিযুক্ত, এবং যে অংশটির অস্তিত্ব আপনি সর্বক্ষণ টের পান।
মধ্য মস্তিস্কের কাজ হল আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা। আর আদি মস্তিষ্ক হল মস্তিষ্কের সেই অংশ যা আপনার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে সদা সক্রিয়। বিবর্তনের ধারায় এই আদি মস্তিষ্কেরই উন্নতি ঘটেছিল সবার আগে। এই আদি মস্তিষ্ক সর্বক্ষণ আমাদের পরিবেশ এবং অবস্থাকে জরিপ করে চলেছে, এবং আশেপাশের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে ভেবে চলেছে তিনটি ভাবনা—
‘আমি কি এটিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারি?’,
‘আমি কি এর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হতে পারি?’,
এবং ‘এটি থেকে কি আমার প্রাণসংশয় হতে পারে?’।
অর্থাৎ এই আদি মস্তিষ্ক কেবল তিনটি বিষয় সম্পর্কে সচেতন— খাদ্য, যৌনতা এবং বিপদ। আদপে টিকে থাকার জন্য এই তিনটি বিষয়ই হল মৌলিক প্রয়োজন। খাদ্য ছাড়া প্রাণীর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, নিজের বংশগতিকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য প্রয়োজন যৌনতা, এবং বিপদ সম্পর্কে সচেতন না হলে অকালে প্রাণ হারাতে হতে পারে। কাজেই পৃথিবীতে মানুষের উদ্ভব মুহূর্ত থেকেই এই তিনটি ভাবনা ভাবিত করে আসছে মানুষকে। আবেগ, বা যুক্তিপূর্ণ ভাবনার মতো বিষয় বিবর্তনের ধারায় অনেক পরে মানুষের মনে দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, খাদ্য, যৌনতা এবং বিপদের চিন্তাকে আমরা মন থেকে তাড়াতে পারব না। তার অর্থ এই নয় যে, আমরা সর্বক্ষণ কেবল খেতে চাইছি, যৌনতায় মাততে চাইছি, কিংবা কোনো বিপদের আশঙ্কায় ভুগছি। কিন্তু অবচেতনে এই তিনটি চিন্তা আমাদের মনের মধ্য কাজ করে চলেছে।
বুড়ো আঙুলে স্রেফ দু’মিনিট এইভাবে ফুঁ। শরীরের অবিশ্বাস্য উপকার হবে এতেই। উদাহরণ দিয়ে উইনশচেঙ্ক বলছেন, ধরা যাক, এক জন পুরুষ অফিসে কোনো কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এমন সময়ে ঘরের মধ্যে এক জন অত্যন্ত আকর্ষণীয় নারী প্রবেশ করলেন, যার সঙ্গে রয়েছেন এক জন ষণ্ডামার্কা বয়ফ্রেন্ড, এবং সেই প্রেমিকটির হাতে রয়েছে একটি অতি লোভনীয় বার্গার।
এই অবস্থাতে সেই পুরুষ যত জরুরি কাজেই ব্যস্ত থাকুন না কেন, ক্ষণিকের জন্য হলেও ওই সুন্দরীর দিকে তার চোখ যাবেই। পরক্ষণেই চোখ যাবে তার বয়ফ্রেন্ডটির দিকে এবং তার হাতে ধরা বার্গারটির দিকে। মেয়েটির দিকে হাত বাড়ালেই পুরুষটির হাতে মার খাওয়ার ভয় চাড়া দেবে মনে, এবং নিজেও ওই রকম লোভনীয় একটি বার্গার গলাধঃকরণের চিন্তা তার মনের মধ্যে খেলে যাবে। ব্যস্ত পুরুষটি যতই চেষ্টা করুন না কেন, এই তিনটি বিষয় অতি সামান্য সময়ের জন্য হলেও তার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই। মানবমনের নিয়মই এটা। খাদ্য, যৌনতা এবং বিপদের চিন্তাকে সে কিছুতেই দূর করতে পারে না।
Comments
comments