মেহেদী হাসান সোহাগ,মাদারীপুর: বাংলাদেশে দামাল ছেলেরা এই দেশে লাল সবুজ পতাকার জন্য যুদ্ধ করেছে। লাল সবুজের পতাকা কেন শুধু সরকারী অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ কোন দিনে আমাদের চোখে পড়বে। লাল সবুজ থাকবে আমাদের মনে প্রাণে, সুখে-দুঃখে সব স্থানে।
সেই উদ্দেশ্যেকে সফল করতেই মাদারীপুরের খাগদী বাসস্টান্ডের পাশে নিজ বাড়ীতে দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করেছে লাল সবুজ নামে একটি অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ পার্ক। আর স্থানীয়রা বলেন, সরকারে সার্বিক সহযোগীতা পেলে শুধু মাদারীপুর নয় সারা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিতে পারে এমন কিছু তৈরি করার চিন্তা করছে জাকির নামে এই ছেলেটি।
তিন বছর আগে জাকির তৈরি করেছিল বাংলাদেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতুর নমুনা অনুযায়ী একটি অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ সেতু। তবে সরকার বা প্রশাসনের তেমন কোন সহযোগীতা না পেলেও মাদারীপুরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। সব কিছু ছেড়ে দুই ভাই মিলে ইটেরপুল নামের একস্থানে দোকান দিয়ে বসে ছিল জাকির। সবকিছু ভালোই চলছিল। গত ছয়মাস আগে ঐ এলাকায় মাদারীপুর টু মস্তফাপুর আঞ্চলিক সড়কে ৪ লাইনের কাজ শুরু হয়। এরপর থেকেই জাকির বেকার। তারপর থেকেই মাথায় পুরনো চিন্তা চলে আসে। শুরু করে একটি ভ্রাম্যমাণ অস্থায়ী পার্ক তৈরির কাজ।
ছয়মাস পরিশ্রম করে, দেড় লাখ টাকা খরচ করে সুন্দরতম একটি অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ পার্ক তৈরি করেছ। পার্কের প্রতিটি স্থাপনা লাল সবুজের পতাকায় তৈরি। তাই লাল সবুজ নাম এই পার্কটির। যেখানে রয়েছে একটি গেট চারদিকে বাউন্ডারিতে বাংলা ও ইংরেজী বর্ণে লেখা অক্ষর। রয়েছে একটি লেক। তার চারদিকে রয়েছে ভিতর বাহিরে মোট ১৪টি বসার স্থান। রয়েছে লেকে মাঝ স্থানে হাতিরঝিলে মত একটি ব্রীজ। লেকের পাশেই রয়েছে একটি ট্রেন লাইন। গ্রহগুলোসহ পৃথিবী যে সূর্যের চার পাশে ঘুরে সেটাও রাখে হয়েছে সবাইকে দেখার জন্য। লেকের পাশেই রয়েছে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের ছাত্র জীবনের একটি ভাস্কর্য।
আর এই জাকিরের লাল সবুজের পার্ক দেখার জন্য প্রতিদিন মাদারীপুরসহ দুর-দুরান্তের হাজার হাজার মানুষ আসাছে। তবে জাকিরের আসা সরকার যদি তাদের পৃষ্ঠপোষকতা কোন কিছু করতে দেয় তাহলে সে আর ভালো কিছু করতে পারবে।
স্থানীয় ও পার্ক দেখতে আসা মামুন, রশিদ, সাইফুল, সামচুল, শকিলা, ভানু বেগমসহ একাধিক দর্শনার্থীরা বলেন, এই ছেলেটি অনেক মেধা রয়েছে। সে কয়েক বছর একবার একটি পদ্মা সেতু তৈরি করে দেখিয়েছিল। এখন তৈরি করেছে একটি সুন্দর লাল সবুজের পার্ক। আর আমরা এই পার্ক দেখতে অনেক দুর থেকে এসেছি। তবে এখানে একটি ঘরের মধ্যে দেখতে অনেক কষ্ট হয়। যদি এই পার্কটি লেকের পাড় আগামী বৈশাখী মেলা উপলক্ষে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা যায় তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে।
জাকিরের মা কহিনুর বেগম বলেন, টাকার অভাবে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারি নাই। তবে আমার ছেলে যে এতো মেধাবী তা ভাবেতেই গর্বে বুকটা ভরে যায়। আর যা কিছু করছে সবই ধার দেনা করে করছে। প্রয়োজন আমাদের সহযোগীতা। তাহলে ছেলে জাকির আরও ভালো কিছু করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
লাল সবুজ পার্কের জাকির হোসেন বলেন, আমি টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারি নাই। তবে আমি এই দেশকে নতুন নতুন কিছু তৈরি করে দেখাতে চাই। আর এর জন্য প্রয়োজন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। আমি আমার এই স্বপ্ন পুরণে সরকারের হস্তক্ষেপ চাচ্ছি।
মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এবিএম বজলুর রহমান রুমি খান (মন্টু খান) বলেন, বিনোদনের জন্য এটা খুব ভালো উদ্যোগ। এটা লোকালয়পূর্ণ জায়গায় হলে আরো বেশি মানুষ উপভোগ করতে পারবে।
Comments
comments